২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯, ১৯ ডিসেম্বর এই দীর্ঘ ৩২ মাস লেগে গেল কাজলবালা ও তার পরিবারকে এটা প্রমান করতে যে এটাই কাজলবালার দেশ, নিজভূম| বিদেশী কাজলবালা থেকে ভারতীয় কাজলবালা হওয়ার এই আইনি পথ টা পেরোতে গিয়ে অবশ্য নিজের পরিচয়টাই ভুলতে বসেছেন কাজলবালা| আড়াই বছরেরও বেশি সময় ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটিয়ে এখন কাজলবালা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন| চিনতে পারেন না কাউকেই | মুখে কুলুপ | মাঝেমাঝে জড়িয়ে ধরছেন নিজর মা কে,ছাড়তে চাইছেন না | আবার পরমুহুর্তে চিনতে পারছেন না নিজের মাকেই |
মণিপুরের জিরিবামে কাজলবালার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা কালীকুমার নম:শূদ্র, মা রেখাবালা নমঃশূদ্র। ১৮ পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায় অসমের জিরিঘাটের ব্যবসায়ী অজিত দেবের সঙ্গে। কিন্তু ভাগ্য বড় নিষ্ঠুর ছিল কাজলবালার| অকালেই হারাতে হয় স্বামীকে| ছেলেকে নিয়ে কোনরকমে দিনপাত করছিলেন তিনি| হঠাতই ট্রাইব্যুনালের নোটিস আসে। কাজলবালার নামে | লেখা, কাজলবালা দেব, স্বামীর নাম কালীকুমার দেব।
কাজলবালার স্বামীর নাম কালীকুমার দেব নয়| এ কথা জানানোর পরই তার রেহাই পাওয়ার বদলে ট্রাইব্যুনাল তাকে বিদেশি ঘোষণা করে| আজন্ম ভারতে বেড়ে ওঠা কাজলবালার ঠাই হয় ডিটেনশন ক্যাম্প-এ| বাবার নামে ১৯৭১ সালের জমির দলিল দেখেও ট্রাইব্যুনাল বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নাকচ করে দেয়|
এরপর হাল ধরেন কাজলবালার ছেলে বাপন| মা’কে ভারতীয় প্রমাণের জন্য আড়াই বছর ধরে লড়াই চালাছেন তিনি। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মানতে না পেরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাপন দেব। মা কে ফিরিয়ে আনার আবেদনে সাড়া দিয়ে আসাম হাইকোর্টের বিচারপতি মামলাটি ফের খতিয়ে দেখতে ট্রাইব্যুনালেই ফেরত পাঠান। নির্দেশ দেন, বাবা-মেয়ের সম্পর্ক বাতিল করে দিলেও ট্রাইব্যুনাল যেন মা-মেয়ের সম্পর্কটা আর একবার খতিয়ে দেখে।
আর দ্বিতীয় সুযোগেই মুক্তি হয় ভারতীয় কাজলবালার| হাইকোর্টের নির্দেশে রেখারানি নমঃশূদ্র সাক্ষ্য গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল| সেখানে দাঁড়িয়ে রেখাদেবী বলেন, কাজলবালা তাঁর মেয়ে। সাক্ষ্য দেন দুই প্রতিবেশীও। এর পরই ট্রাইব্যুনাল কাজলবালাকে ভারতীয় পরিচয় মেনে নিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেয়। কিন্তু ততদিনে নিজেকেই যে ভুলে যেতে বসেছেন কাজলবালা| আবার নতুন লড়াইয়ের জন্য তৈরী হচ্ছে তাঁর পরিবার|