এই দূষণময় ব্যস্ততম সময়ে - দূষণমুক্ত একমাত্র বাহন যা সর্বসাধারণের উপযোগী তা এককথায় সাইকেল। দু চাকার এই বাহনটির ব্যবহার যত বেশি, ভরণপোষণ খরচ তার সিকি ভাগও নয়। কিন্তু সেই খরচ যদি আরো কমানো যায়, তার উপর কাঠামোকে যদি তা আরো হালকা করে তোলা যায় তাহলে কেমন হয়? আর এই ভাবনা থেকেই সাইকেলকে নতুন আঙ্গিকে আনতে চলেছেন বাংলাদেশের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার সৈকত। কিন্তু তাতে নতুনত্ব কোথায়? আছে - এতদিন পাটের তৈরী কাপড়, ব্যাগ অনেক কিছুর কথা শুনেছেন - ব্যবহারও করেছেন। কিন্তু পাটের সাইকেল -এমন কি কখনো শুনেছেন? হলফ করে বলা যায় শোনেন নি। কারণ তার জন্ম হয়েছে সবেমাত্র।
জন্মদাতা বাংলাদেশের ঢাকা পলিটেকনিকের প্রাক্তন ছাত্র মোহাম্মদ আবু নোমান সৈকত। যিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। আশ্চর্যের বিষয় এই সাইকেল রাস্তায় চলছেও বহাল তবিয়তে, যদিও পরীক্ষামূলকভাবে। কিন্তু এই অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসার কারণ দৈনন্দিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বাহনটির কাঠামোকে আরো হালকা করে তোলা, সাথে খরচ কমানো, সর্বোপরি দূষণ কমানো। এক্ষেত্রে অবশ্য কার্বন ফাইবারের ব্যবহার উপযুক্ত হলেও তার ব্যয়বাহুল্যতা এর অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষত্রে সহজলভ্য পাট সৈকতবাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে - আর সেই পথ চলা শুরু। প্রাথমিক ভাবে ২০১৫ সালে গবেষণা শুরু হলো, কি ধরণের পাট, তার আঁশ কিভাবে ব্যবহার হবে, কত ঘনত্ব, তার সম্যক বিষয় জ্ঞানার্জনের পর পাট ও রেজিন ব্যবহার করে পুরো বিষয়টাকে শক্ত পাইপের আকার দেন। তারপর সেই পাইপের অংশ প্রয়োজনমতো সাইজে কেটে তৈরী হয় সাইকেল। রেজিন প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে নষ্ট হলেও পাট পচবে না। অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের সাইকেল বানাতে যে পরিমান জল লাগে এক্ষেত্রে তার পরিমান অনেক কমে যাবে যা জলের সাশ্রয়ের সহায়ক হবে। তাছাড়া পরিবেশের দিক থেকেও দূষণ মুক্ত থাকবে।
এমনিও সাইকেল দূষণমুক্ত একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম। কিন্তু তা আরো হালকা ও স্বল্প ব্যয়ে যাতে যাতায়াতের সহায়ক হয় সেই জন্য এই প্রয়াস। কিন্তু ব্যবসায়িক দিক থেকে এই সাইকেল এখনো কিছুটা গবেষণাধীন। তবে তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ জনমানসে বেশ আকর্ষণের উদ্রেক করেছে। তাই বলা বাহুল্য বাংলাদেশের বাঙালির এই নতুন আবিষ্কার জনপ্রিয়তার ও ব্যবসায়িক দিক থেকে শীর্ষে থাকবে।