মনুষ্য জীবন তো বটেই, এই মহাজাগতিক সৃষ্টিতত্ত্বের কতটুকুই বা আমাদের জানার আয়ত্তে রয়েছে! দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর...লাট্টুর মত বনবনে পৃথিবীতে নিরন্তর কত কিছুই না ঘটে চলেছে। বিজ্ঞান তথা মনুষ্যবুদ্ধিজাত 'স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন' ব্যবস্থা, ইন্টারনেটীয় মাধ্যমের সুবাদে সেই অহরহ ঘটে চলা কিছু কিছু ঘটনার কাছাকাছি আমরা পৌঁছাতে পারি। সেই কিছু কিছু ঘটনার মধ্য থেকেই মাঝে মধ্যে উঠে আসে বেশ আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য। তেমনই এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল হংকংয়ের কুইনস এলিজাবেথ হাসপাতালে, যেখানে সদ্য প্রসব করা সন্তানের আকুল কান্না মৃত্যুর ওপার থেকে ফিরিয়ে এনেছিল মৃত মা'কে।
'মিরাকল'টি ঘটেছিল জুলিয়া মার্থারের সঙ্গে। জুলিয়া যখন গর্ভবতী তাঁর শরীরে তখনই দেখা দিয়েছিল বেশ কিছু জটিলতা। চিকিৎসরা আশঙ্কা করেছিলেন, সন্তান প্রসবের সময়ে তাঁর অথবা তাঁর সন্তান- কোনো একজনের প্রাণসংশয় হতে পারে। কার্যক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটে। সুস্থ সন্তান প্রসব করেন জুলিয়া। কিন্তু সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁর। ডাক্তাররা বুঝে যান, যা আশঙ্কা করেছিলেন, ঠিক সেটাই ঘটেছে। প্রসবের সময়ে মারা গিয়েছেন জুলিয়া।
কিন্তু বিদেশের তাবড় তাবড় ডাক্তাররা তখনও জানতেন না, কোনো অত্যাশ্চর্য ঘটনা অপেক্ষা করে রয়েছে তাঁদের জন্য। জন্মের পর থেকেই ক্রমাগত কেঁদে চলেছিল জুলিয়ার সদ্যজাত পুত্রসন্তানটি। ডাক্তাররা নানাভাবে বাচ্চাটির কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তু জন্মের পর মায়ের সংস্রবে না থাকায় কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না তাকে। ডাক্তার ও নার্সদের তখন মনে হয়, মায়ের শরীরের সান্নিধ্য হয়তো চুপ করাতে পারে শিশুটিকে। কিন্তু সেই মা তো আর জীবিত নেই তখন। তা হোক। হাসপাতালের কর্মীরা শিশুটিকে নিয়ে যান মায়ের মৃতদেহের কাছে। শিশুটি নিজের ছোট্ট দু'টি হাতে আঁকড়ে ধরে চার ঘণ্টা আগে মৃত মায়ের মুখ। আর তার পরেই ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।
সামনে উপস্থিত ডাক্তার ও নার্সরা পরম বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেন, শিশুটির আকুল কান্নার শব্দে ধীরে ধীরে হৃদস্পন্দন ফিরে আসছে জুলিয়ার দেহে। একটু পরে চোখ খোলেন তিনি। ফিরে আসেন জীবনের পারাবারে। শিশুটির কান্না ততক্ষণে থেমেছে।
কিন্তু কীভাবে ঘটল এমন পরম বিস্ময়কর ঘটনা? হাসপাতালের গাইনোকলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার পিটার অরল্যান্ডো জানান, গর্ভাবস্থাতেই জুলিয়ার শরীরে বিভিন্ন জটিলতা তৈরী হয়েছিল। প্রসবকালীন 'শক' এবং যন্ত্রণা জুলিয়ার হৃদস্পন্দন কয়েক ঘন্টার জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর মস্তিস্ক তখনও ছিল জীবিত। সন্তানের কান্না সেই মস্তিষ্কেই ক্রিয়া করেছে। যার দরুণ সচল হয়ে ওঠে মায়ের হৃদপিণ্ড। আর বেশিক্ষণ তার হৃদপিণ্ড স্তব্ধ থাকলে তাঁকে আর বাঁচিয়ে তোলা যেত না।
ভালোবাসা তো বটেই, নাড়ির টান যে সত্যিই অসাধ্য সাধন করতে পারে, প্রাণ সঞ্চার করতে পারে মৃ্তের দেহে, সেটারই যেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই এই ঘটনা।