বিয়ে হয়েছে অনেকদিন। পার্বতী তবুও ছেলেপুলের মুখ দেখলেন না। দেখবেন কী করে, সংসারে স্বামী মহাদেবের মন তো একেবারেই নেই! উড়নচণ্ডী লোক একটা। শ্মশানে-টশানে ঘুরে বেড়ান, ঘরে ফেরার নামই নেই; অথচ মা হওয়ার জন্য এদিকে পার্বতীর আনচান অবস্থা! স্বামীর আশায় বসে থাকলে তাঁর এ আকাঙ্ক্ষা সহজে পূর্ণ হবে না। তাহলে উপায়?
স্কন্দপুরাণের একটি গল্পে দেখতে পাই, সন্তানের কথা ভাবতে ভাবতে একদিন পার্বতী নিজের গায়ের ময়লা দিয়ে ছোট একটি সুন্দর পুতুল গড়ে ফেললেন। তাকে দেখেই পার্বতীর মনে প্রবল বাৎসল্য জেগে উঠল। তক্ষুনি প্রাণদান করে তার নাম দিলেন গণেশ। প্রাণ পেয়ে ছেলে তো পার্বতীকে একেবারে 'মা মা' বলে জড়িয়ে ধরল। পার্বতীও প্রবল স্নেহে তাকে বুকে চেপে ধরলেন।
দেবতারা খবর পেয়ে পার্বতীর ছেলেকে দেখতে এলেন। শনিদেব দেখতে এসে বিপত্তি ঘটালেন। তিনি গণেশের দিকে তাকাতেই গণেশের মুণ্ডু একেবারেই উড়ে গেল। আর পাওয়া গেল না। তখন ছেলেকে হারিয়ে পার্বতী খুব কান্নাকাটি করছেন দেখে, বিষ্ণু হাতির মাথা গণেশের ধড়ে বসিয়ে তাকে বাঁচিয়ে দিলেন। মহাদেব এসব খবর কিছুই জানলেন না। একলা মা পার্বতী গণেশকে বড় করে তুললেন।
একদিন বাড়ি ফিরলেন মহাদেব। গণেশ সেসময় পার্বতীর ঘরের বাইরে পাহারা দিচ্ছিলেন, মহাদেব ঘরে ঢুকতে চাইলে বাধা দিলেন, কারণ তিনি তো মহাদেবকে চেনেন না। কাজেই দুজনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হল। যুদ্ধে গণেশের একটা দাঁত খোয়া গেল। তখন পার্বতী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বাপব্যাটার পরিচয় করিয়ে দিলেন। মহাদেব ছেলেকে পেয়ে খুশি হয়ে দাঁত খোয়ানোর ক্ষতি পুষিয়ে দিতে তাঁকে সব দেবতার পুজোর আগে পুজো পাবার বর দিলেন। এভাবেই একলা মা ও তাঁর সন্তানের সম্মান ও স্বীকৃতির একটা গল্প আমরা পাচ্ছি গণেশের জন্মকথার মধ্য দিয়ে।