মাটি থেকে ১৮ হাজার ২০০ ফুট উপর। ৫ হাজার ৫০০ মিটার উঁচু শৃঙ্গ। সাদা বরফে ঢাকা। তার ওপর রোদ এসে পড়েছে। রূপালি বরফ আর সোনালী রোদ, মাথার উপর উজ্জ্বল সূর্য, ঝকঝক করছে চারপাশ। পায়ের তলায় ধূসর রুক্ষ পার্বত্য ভূমি। তার মাঝেই শক্ত হাতে ধরা তেরঙ্গা উড়ছে ঝটপটিয়ে। হিমালয়ের কালাপাথার পর্বত শৃঙ্গ। এভারেস্টের বেসক্যাম্প।
পতাকা ধরে আছে ৭ বছরের এক শিশু। আর শিশুকে আরও শক্ত হাতে আঁকড়ে আছে এক পিতার হাত। পুত্রের নাম অবনীশ, পিতা আদিত্য তেওয়ারি।
স্বপ্ন ছোঁয়ার খুশি আর আত্মবিশ্বাস সকালের আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পিতা-পুত্র দুজনের মুখেই। পথের ক্লান্তি, ভয়, আশঙ্কা ম্লান হয়ে যায় সাফল্যের কাছে। অবনীশ কনিষ্ঠতম পর্বতারোহী হিসেবে ট্রেক করল এভারেস্টের বেসক্যাম্প। এভারেস্টের পথ সহজ নয় নিয়মিত পর্বতারোহীদের কাছেই, অবনীশ কনিষ্ঠতম। তার কাছে এই পথ ছিল আরও কঠিন। অবনীশ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা
জন্মের সময় থেকেই জিনের ত্রুটি। জন্মের পর জন্মদাতা বাবা-মা পরিত্যাগ করে তাকে। জায়গা হয় অনাথ আশ্রমে। তাকে দত্তক নেন আদিত্য তেওয়ারি। আদিত্য ‘সিঙ্গেল ফাদার’। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র, নেশায় সমাজসেবী।
কিন্তু আদিত্যই অবনীশের মা এবং বাবা। দুজনেই দুজনের জীবন জুড়ে। পিতা এবং পুত্রের শৃঙ্গ জয়ের দৃশ্য বারবার মনে করিয়ে দেয় সত্যজিৎ রায়ের অপু আর কাজলের কথা। তাদেরও ছিল বিশ্ব দেখার টান। পাহাড় জয়ের নেশা। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের অবনীশ আর আদিত্যর গল্প একটু আলাদা।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত মানুষকে যেভাবে ‘বাতিল’ বলে দাগিয়ে দেয় সমাজ, তাদের লড়াই সেই ধারনার বিরুদ্ধেই। অবনীশ আর আদিত্যর পর্বতারোহনের মূলেই এই বার্তাই।
দুজনের শৃঙ্গ জয়ের ছবি পোস্ট করে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে আদিত্য লিখেছেন, “আমি শিখলাম ভয় না পাওয়া সাহস নয়, বরং ভয়কে জয় করাই সাহস। সাহসী মানুষ সে নয় যে কখনও ভয় পায়নি, বরং সাহসী সেই যে ভয়কে জিতে ফিরেছে। ‘আমাকে তোমার জীবনের অংশ হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ’
অবনীশ ‘স্পেশাল অলিম্পিক ভারত’এ অংশগ্রহণকারী একজন ক্রীড়াবিদ। অতীতে ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতা আছে। মোহালির আর্মি পাবলিক স্কুলের ছাত্র অবনীশ স্কুলেও প্রশিক্ষণও নিয়েছে।
চিত্র সৌজন্যঃ আদিত্য তিওয়ারি