জলে আর্সেনিকের প্রভাব বেড়ে গেলে যথেষ্ট শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে দিতে যায় মানুষ। তাই যেখানে যেখানে এই প্রকোপ রয়েছে, সেখানে কিছু না কিছু বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পানীয় জলেই নয়, চাষের কাজে ভৌমজল ব্যবহার করার ফলে সেই শস্যতেও আর্সেনিকের প্রভাব চলে যাচ্ছে। আর্সেনিকযুক্ত জল পান করলে তা মাতৃদুগ্দ্ধ থেকে শিশুর শরীরে চলে যায়। উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতা সহ কলকাতাতেও আর্সেনিকের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ৪ ডিসেম্বর কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে পানীয় জল নিয়ে আয়োজিত একটি সেমিনারে পঞ্চায়েত এবং জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি এই সমস্যার মোকাবিলায় 'জল ধরো জল ভরো' প্রকল্পের ওপর জোর দেন। ভূপৃষ্ঠের জল বা নদীর জলে আর্সেনিক থাকেনা। ব্রিটিশদের তৈরী কলকাতার পানীয় জল সরবরাহ ছিল সম্পূর্ণ গঙ্গা নির্ভর, তাই তখন আর্সেনিক প্রভাব ছিল না কলকাতার সরবরাহ হওয়া পানীয় জলে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আর্সেনিক প্রভাবিত উঃ ২৪ পরগনা, নদীয়া এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় 'সুলভ জল' নামে ৫০ পয়সা প্রতি লিটার দরে পানীয় জল ও রান্নার জল সরবরাহ করে আসছে। এবারে আরো বেশি করে সরকারিস্তরে তা ছড়িয়ে দিতে সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চাইছে ওই সংস্থা। সুলভ জলের পাইলট প্রকল্প খুব মনোগ্রাহী নিয়মে চলে। ১০০ দিনের প্রকল্পের অধীনে পুকুর খুঁড়ে তাতে জল ধরে ধরে রাখা হচ্ছে| প্রায় দু কোটি লিটার জলের ভান্ডার রয়েছে পুকুরগুলিতে। সেগুলি উঁচু করে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, যাতে বাইরের জমির চাষের জল পুকুরে ঢুকতে না পারে। পুকুর পাহারা দেওয়া এবং পরিষ্কার রাখার জন্য প্রায় ২০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল গঠন করা হয়েছে। পুকুরে মাছ ছাড়া হয়েছে যাতে জল দূষিত হলে তা বোঝা যায়। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লিটার জল তুলে তাতে ব্লিচিং পাউডার এবং ফটকিরি মেশানো হয়, তারপর তা থিতিয়ে গেলে তাতে বালি, নুড়িপাথর এবং চারকোলের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করে উন্নত ছাঁকনির মাধ্যমে তা ছেঁকে নিয়ে অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে সেই জল বোতলজাত করা হয়। সরকারি পরীক্ষায় দেখা গেছে এই জল সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত। কম্বোডিয়া এবং মাদাগাস্কারেও এই পদ্ধতিতে জল পরিশুদ্ধ করা হচ্ছে। তাই এইভাবে জল পরিশুদ্ধ করে জল ব্যবহার করলে বা পান করলে আর্সেনিকমুক্ত জল আমরা পেতে পারি বলে মনে করা হচ্ছে।