এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সমস্ত মানুষ, তাদের অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বের কারণে অদৃষ্টের সন্ধানকেই থিম হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরতে চলেছে জয়রামপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যবৃন্দ।
জিয়ো বাংলা শারদ সম্মান ২০১৯ অনুষ্ঠান উপলক্ষে জিয়ো বাংলার স্টুডিওতে সঞ্চালক নবনীতার সাথে উপস্থিত ছিলেন এই ক্লাবের সেক্রেটারি শ্রী দীপাঞ্জন সেনগুপ্ত, থিম শিল্পী শ্রীমতি উপাসনা চ্যাটার্জি এবং ক্লাবের সদস্য শ্রী প্রণব দত্ত। জিয়ো বাংলা পুজোর আড্ডাতে এসে তারা আমাদের সাথে ভাগ করে নিলেন তাদের পুজোর খুঁটিনাটি। শিল্পী জানালেন তাদের এবছরের থিম সম্পর্কে। তিনি জানালেন, মানুষ এবং মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে অদৃষ্টকে খুঁজে পাওয়ার এক অদম্য চেষ্টাকেই তুলে ধরা হচ্ছে এই ক্লাবের পুজোর থিম হিসেবে।এইবছর থিমের নাম রাখা হয়েছে 'দেবী' বা 'সেলিব্রেশন অফ সেলফ'।
শিল্পীর মতে তাদের পুজোর ৭২তম বর্ষে, বিশ্বব্রহ্মান্ডের চারপাশে যে মহাশুন্য রয়েছে তাতে বিরাজমান রয়েছেন কালা যাকে আমরা শিব বলেই জানি। আর যেই মুহূর্তে এই শুন্যের মধ্যে একটি শক্তির স্ফুলিঙ্গ জন্মায় তাকে বলা হয় শক্তি। আর এই শিব ও শক্তির সমন্বয়েই তৈরী এই গোটা বিশ্ব। শিল্পীর কথায়, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীরাই তাদের অদৃষ্টের সাথে এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ। সেই প্রাণী ঠিক যেই সময়ে তার অদৃষ্টের খোঁজ পায় সেই সময়টাকেই বলা হয় ‘সেলিব্রেশন অফ সেলফ’। প্রতিটি সাধারণ জিনিসের মধ্যে অসাধারণ কিছুর খোঁজ দেওয়াই মূল লক্ষ্য এই ক্লাবের।
তারা জানান প্রাথমিক ভাবে সাবেকি পুজো করলেও ৩ বছর হল থিমে প্রবেশ করেছেন তারা। জানা গেছে, ১৯৪৮ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয় তাদের ক্লাবে। এরপর সময়ের অগ্রগতীর সাথে তালে তাল মিলিয়ে আধুনিকীকরণ আসতে থাকে এই পুজো। ৪ঠা আগস্ট দৃষ্টিহীন শিশুদের হাত ধরে খুঁটিপুজো দিয়ে শুরু হয়ে পুজোর প্রস্তুতী। জানা গেছে, শিল্পী উপাসনাদেবীর একটি নিজস্ব অর্গানাইজেশন 'রোদ্দুর'-এর সাথে যুক্ত সেইসব শিশুদের হাতে তৈরী নানা কাজ এইবার স্থান পেতে চলেছে মাতৃমূর্তির চালচিত্রে। পুজো ছাড়াও বছরভোর রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্য শিবির প্রভৃতি বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিযুক্ত থাকেন তারা। ভোগের প্রসঙ্গে তারা জানালেন, মহাষ্টমীর দিন ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা করা হলেও পুজোর পরে একদিন ক্লাবের সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়ে বনভজন আয়োজন করা হয়।
ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপ সংলগ্ন অঞ্চলে প্রাথমিক চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থায় থাকবে। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধের সবটাই রাখা থাকবে সেখানে। অদৃষ্টের সাথে মানুষ কিভাবে অদৃশ্যভাবে যুক্ত থাকে তা জানতে হলে অবশ্যই পৌঁছে যেতে হবে জয়রামপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এই পূজা মণ্ডপে। দমদম বা কবি সুভাষগামী যে কোনও মেট্রোয়ে উঠে নামতে হবে শিমুলতলা, সেখান থেকে রিক্সা করে জয়রামপুরের নিকট এই পূজা মন্ডপ।