চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতনামা অভিনেত্রী জয়া ভাদুড়ী বচ্চন। বর্তমানে মুম্বইবাসিনী হলেও তাঁর শিকড় কিন্তু বাংলায়। তাঁর বাবা ছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক তরুনকুমার ভাদুড়ী ও মা- ইন্দিরা ভাদুড়ী। তাঁর জন্ম মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে। ভোপালের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে সারা ভারত সেরা এনসিসি ক্যাডেট সম্মানে সম্মানিত হন, খেলাধূলায় বিশেষ আগ্রহ ছিল জয়া'র। জানা যায় ছোট থেকেই খুব জেদি ছিলেন তিনি। যা একবার চাইতেন তা অর্জন করে তবেই শান্ত হতেন, অবশ্য তাঁর এই বিশেষ গুণের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর ব্যক্তিত্বে এবং তাঁর অভিনীত একাধিক ছবিতে।
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই যে ছবির কথা মনে আসতে বাধ্য, তা হল 'ধন্যি মেয়ে'। ইদানিং-ই যে 'নারীকেন্দ্রীক' সিনেমার প্রচলন হয়েছে তা কিন্তু একেবারেই নয়, আর তার প্রমাণস্বরূপ এই ছবিটিই আদর্শ। সেইসময়ের নিরীখে একজন মহিলা চরিত্রকে 'প্রোটাগনিস্ট' করে একটা আস্ত বাংলা ছবি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং কেরিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে বাঘা-বাঘা অভিনেতাদের সঙ্গে সাবলীল ভাবে তুখোড় অভিনয় করে যাওয়া সেই 'ধন্যি মেয়ে'ই হলেন জয়া ভাদুড়ী।
'ধন্যি মেয়ে' ছাড়াও তিনি একাধিক কালজয়ী ছবিতে অভিনয় করেন, 'মহানগর', গুড্ডি, উপহার, চুপকে চুপকে, অভিমান, সিলসিলা, হাজার চুরাশিকা মা... সেগুলির মধ্যে অন্যতম।
খেলাধূলার সঙ্গে লেখাপড়াতেও ছিলেন ব্রিলিয়ান্ট। উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে অ্যাডমিশন নেন জয়া। তবে তার আগেই তিনি তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি, সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবিতে কাজ করে ফেলেছিলেন। সেই ইন্সটিটিউট থেকে গোল্ড মেডেল নিয়ে পাশ করেন তিনি।
কেরিয়ারের একেবারে শুরুতে তিনি জয়া ভাদুড়ী হিসেবেই জনপ্রিয় ছিলেন, পরে বলিউডের বিগ-বি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পর তিনি হয়ে ওঠেন জয়া বচ্চন। পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে পড়াকালীনই তাঁর পরিচয় অমিতাভের সঙ্গে, পরে আবার দেখা হয় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবি গুড্ডি-র সেটে। তারপর একের পর এক জনপ্রিয় ছবিতে ‘জুটি হিসেবে’ কাজ করেছেন তাঁরা। সংসার এবং সন্তানদের বড় করে তুলতে অভিনয় জগত থেকে খানিক দূরে সরে আসেন অভিনেত্রী, মাঝে যোগ দেন রাজনীতিতে। ২০০১-এ ‘ফিজা’ ছবির মাধ্যমে ফের অভিনয়ে ফেরেন তিনি, তার পর অভিনয় করেন ‘কভি খুশি কভি গম’ ও ‘কল হো না হো’ ছবিতে।
জয়া তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য তিনবার ফিল্মফেয়ার-এ সেরা অভিনেত্রীর শিরোপা পান এবং ২০০৭ সালে তিনি পান লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট-এর সম্মান। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করেন। ঘরে-বাইরে তাঁর এহেন সাফল্যই বলে দেয় সেলুলয়েডের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব জীবনেও তিনি সত্যকারের ‘ধন্যি মেয়ে’। আজ ৯ এপ্রিল, তাঁর ৭১ তম জন্মদিন।