মাঝারি গড়ন। এক মাথা সাদা চুল। সিল্কের পাঞ্জাবি।চাপা গলার স্বর। চলন-বলন-কথনে ঝরে পড়ছে উত্তরে আভিজাত্য। সোনালী কলমে প্রেমের ঝর্না। অনবরত পড়েই চলেছে। সারা দেশ তাঁকে চেনে বিরহের কবি হিসেবে। তাঁর কলম বিরহের গান গাইলেও তিনি কিন্তু সদা হাস্যময়।
তিনি জাভেদ আখতার। কবি। চিত্রনাট্যকার। গান লিখিয়ে। সব কিছু ছাপিয়ে তিনি একজন প্রগতিশীল মুক্ত ভাবনার মানুষ।
জন্ম গোয়ালিয়রে। বোধ জন্মেছে আলিগড়ে।ভোপাল জুগিয়েছে কল্পনা। আর মায়ানগরী বোম্বাই তাঁকে দিয়েছে প্রকৃত জীবন।
বাবা জান নিসার আখতার সেই সময়ের প্রখ্যাত উর্দু কবি ও চলচ্চিত্রের গীতিকার।সাত প্রজন্মই সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত।তাঁর মায়ের বাবা মুজতার খায়রাবাড়ি উর্দু কবিতার মাইলস্টোন।
বম্বের আলো যখন গায়ে পড়ল তখন পকেটে মাত্র ২৭ পয়সা। পিছুটান হিসাবে রয়েছে বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য। অনিশ্চয়তার মেঘ গোটা আকাশ জুড়ে। তবে নিজের ভাগ্যকে একবার দেখে নেবেন পরীক্ষা করে। বয়স সবে বিশের দোড়গোড়ায়।
আজ কী হল, কাল কী হবে কোনও কিছুর ঠিক নেই। কোনও কোনও দিন এমনই কঠিন যে খাওয়া জুটবে কি তারও কোনও ঠিক নেই। টানা দু’বছর চলল এই অবস্থা। তবু মাটি কামড়ে তিনি। কমল স্টুডিও, এখন নটরাজ ) তে দিন রাত যাপন চলছে। কাজের কোনও সঠিক সংস্থান নেই। কখনও সখনও মধ্য মানের ছবি গুলিতে গল্প লিখিয়ে হিসাবে পকেট গুজরান হয়েছে।
অনিশ্চয়তার ৫ বছর কেটে গিয়েছে এইভাবেই। তাও হাল ছাড়েননি। রাতে মেরিন ড্রাইভের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ আর সমুদ্রের কলহ দেখে কল্পনার সাগরে ডুব দিয়েছেন।১৯৬৯ এ প্রথম ‘ব্রেক’। ভাসতে ভাসতে তীর পেলেন শেষে। সাফল্য আর খ্যাতির নৌকো আজও বয়ে চলেছে।
‘শোলে’- ‘জঞ্জীর’- ‘দীওয়ার’- ‘ডন’ থেকে শুরু করে হালের ছবি’ জিন্দাগি না মিলেগি দোবারা’-য় কবিতা লেখা; এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়।সম্মান ও পুরস্কারের তালিকাও দীর্ঘতর।
১৯৮১ তে সেলিম জাভেদ জুটির দ্বৈত বিজয় রথ আলাদা হয়ে যায়। তবুও সাফল্য পিছু ছাড়েনা সেখানেও। সাগর, বেতাব, মিস্টার ইণ্ডিয়া...একের পর এক ব্লকবাসটারে দেশ কাঁপছে।
প্রথম স্ত্রী হানি ইরানি। উপহার দুই সন্তান। ফারহান আখতার আর জোয়া আখতার- তাদের পরিচিতিও আজ পাহাড় সমান। কর্ম ব্যস্ততা বৈবাহিক সম্পর্কে চিড় ধরালো।আলাপ হল কাইফি আজমির কন্যা শাবানার সঙ্গে। শাবানাও নাকি সেই সময় নিজের অস্তিত্ত্বের সন্ধানে ঘুরছেন। দুজনের কাছে আসতে আর বেশী সময় বাকি রইল না- এরকমটাই মতামত জাভেদ সাহেবের।
জাভেদ আখতারের প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বের আলো শুধুমাত্র সেলুলয়েডের পর্দা ঘিরেই থেকে যায়নি। ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের অন্যান্য স্তরেও।আজ তিনি একজন সক্রিয় সামাজিক কর্মী ও সুবক্তা। সামজিক হোক বা রাজনৈতিক যেকোনো নীতিহীন কাজের প্রতিবাদ করা থেকে তিনি বিরত থাকেন না। সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রিয় সরকারের অনেক মুখপাত্রের সঙ্গেই এ বিষয়ে তিনি এক হাত নিয়েছেন।
১৯৯৫ সালে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক তাঁর লেখা বহু দেশাত্মবোধক কবিতাকে দেশের জাতীয় যুব সঙ্গীতের তকমা দিয়েছে। এই কবিতা গুলিতে নারীর অধিকার, জাতীয় সংহতি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সামাজিক অন্যায়ের পক্ষে বিপক্ষে সরব হয়েছেন।
সদা উদার এই লেখক, কবি, গীতিকার ও সমাজ সচেতক কে শুভ জন্মদিনের অসংখ্য শুভেচ্ছা। আগামী দিনে কলম আরও গর্জে উঠবে এই আশা রেখে তাঁর একটি লাইন তুলে আনা যেতে পারে,-
‘দিলো মে তুম আপনি বেতাবিয়া লেকে চাল রাহে হো তো জিন্দা হো তুম...’।