বাঁকুড়ার বারকোণা গ্রাম যাত্রার পীঠস্থান। পশ্চিমবঙ্গের এই একটি মাত্র গ্রাম যেখানকার বসবাসকারীরা সময় আর অর্থে শুধু যাত্রা নিয়ে রয়েছেন এমন পরিচয়ে গর্ববোধ করেন। নব্বই বছর আগের প্রযোজনা 'শ্মশান মিলন' যাত্রাটি এই গ্রাম থেকেই গড়ে উঠেছে। যাত্রা, এই গ্রামের অন্যতম পরিচয়। গ্রামবাসীরা পেশায় যাই হোন নেশায় তারা বিশেষ যাত্রা প্রিয়। এই গ্রামের পূর্ব পুরুষরা শিবেরগাজন নিয়ে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে যাত্রা শুরু করেছিলেন। একে একে সেই পথেই শুরু হয় কৃষ্ণযাত্রা, রামযাত্রা, নিমাইযাত্রা, মনসাযাত্রা পালা।
ঊনবিংশ শতকে ব্রিটিশ দাপটে যখন বাংলা কাঁপছে তখন ব্রিটিশ বিরোধী যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করেছে বারকোণার শিল্পীরা। ১৮৯৮ সালে বারকোণায় শুরু হয় শৌখিন প্রযোজনা যেখানে পুরুষ ও নারী চরিত্রে অংশগ্রহণ করেন গ্রামেরই বাসিন্দারা। এই বছরেই গ্রামে নির্মিত হয়েছিল গণেশচন্দ্র পট্টনায়কের তৈরী একটি শিবমন্দির। প্রতি নববর্ষে এই মন্দিরে শিবের গাজন উপলক্ষ্যে বসত মেলা। এই মেলাতেই নতুন পালা মঞ্চস্থ করত গ্রামবাসীরা। মহেশ্বর শিবের নামে তখন যাত্রাদলটির নামকরন হয় ‘মহেশ্বর অপেরা’। বারকোণা গ্রামে শুরু থেকেই একটি মাত্র যাত্রার দল। গ্রামের পূর্বজরা অগ্রজদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। দলটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭২ জন। দলের আয়োজক-প্রযোজক সবই এ গ্রামের মানুষেরা। যাত্রাদলের তত্বাবধায়নে রয়েছে 'বারকোণা গ্রাম ষোলোআনা কমিটি'।
প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি এবং পয়লা বৈশাখ, এই দুই রাতে যাত্রাগান মঞ্চস্থ হয়েই থাকে বলে জানিয়েছেন মহেশ্বর অপেরার প্রধান দুই অভিনেতা জন্মেজয় চট্টোপাধ্যায় ও নয়ন মাজি। 'বিবেক' চরিত্রটি ছাড়া আর সকল পুরুষ চরিত্রেই অভিনয় করে থাকেন গ্রামেরই অভিনেতারা। অতিথি অভিনেতা নিয়ে আসার কোন প্রয়োজন হয় না। যাত্রায় অংশগ্রহণ করে সকালে গ্রামবাসীরা ফিরে যান যার যার কর্মস্থলে। তাতে থাকেনা কোন ক্লান্তি, বরং যাত্রাকে নেশা করে টিকিয়ে রাখার পরিতৃপ্তি রয়ে যায় বারকোণা গ্রামবাসীর মনে।