মুকুট, টায়রায় শোভিতা। অষ্টদশ কর শঙ্খ, চক্র, পদ্ম, অস্ত্রে শোভিত। যোগমুদ্রায় পদ্মাসনে উপবিষ্টা সালঙ্গকারা এক দেবী। হঠাৎ দেখলে মনে হবে দেবী দুর্গা। কিন্তু ভুল ভাঙতে সময় নেয় না। এই দেবী আমাদের চেনা অসুরদলিনী নন। ইনি জাপানের দেবী জুন্তেই ক্যানন। অন্য নামে দেবী চন্ডী।
জাপানী দেবী চন্ডী, তিনি চন্ডী ধরনী মন্ত্রের প্রতীকী রূপ। তার থেকেই উৎপত্তি হয়েছে জুন্তেই ক্যাননের। জুন্তেই শব্দের অর্থ করুণা, বা দয়া। ক্যানন বোধিসত্ত্ব। যিনি পরমজ্ঞান পেয়েছেন।
জুন্তেই ক্যানন ধর্ম রক্ষা করেন। মানুষের বিশ্বাস তিনি সৌভাগ্য প্রদায়িনী। দেবীর উৎপত্তি বা উপাসনার সূচনা প্রথম হয় দক্ষিণ ভারত। প্রথম বা অথবা দ্বিতীয় শতকে। তিনি চিহ্নিত হন ‘মাদার অফ বুদ্ধাস’ হিসেবে।
শ্রীশ্রী চন্ডীতে তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায়ে অষ্টদশভূজা মহালক্ষ্মী দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতের সেম্মবাকম্মে মন্দিরও আছে।
মহাযান পরিব্রাজকদের হাত ধরে দেবীর এই রূপ জাপানে পৌছায়। পরবর্তী সময়ে জাপান এবং কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে তিব্বতে সেভাবে জনপ্রিয়তা পাননি। দেশ ভেদে বদলে বদলে গিয়েছে নামও। তবে মূর্তিতে খুব একটা বদল আসেনি।
জুন্তেই ক্যাননের যে ছবি পাওয়া যায় সেখানে নীল, সবুজ, বাদামী রঙের আধিক্য দেখা গিয়েছে। দেবীর মূর্তিতে বৌদ্ধ প্রশান্তির ছাপ।
সপ্তম শতক নাগাদ জুন্তেই ক্যানন হয়ে ওঠে জাপানের দুর্গা। মহাযানের ১৮ মহাগুণকে প্রতীক অর্থে উপস্থাপিত করেন তিনি। সেই কারণেই দেবীর বাহু সংখ্যা ১৮।
পরবর্তীকালে চুন্ডি দেবীর উপাসনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চিন এবং জাপানেও। চিনে তাঁর নাম জুন্তেই পুসা।
আমাদের চেনা ‘মা দুগগা’র সঙ্গে জুন্তেই ক্যাননের দর্শনগত কোনও মিল নেই। একমাত্র তাঁর বরদা রূপটি ছাড়া। চিনের মানুষের প্রাচীন বিশ্বাস ছিল ‘জুন্তেই পুসা’র আরাধনায় ভাল থাকে সন্তান সন্ততি। আমাদের সম্বতসরের দুর্গা আরাধনার মূল সুরটিও যেন সেই সুরেই বাঁধা।