জন্মাষ্টমীর প্রাক্কালে কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা মথুরা-বৃন্দাবন

বৃন্দাবন কৃষ্ণভূমি। কংসের কারাগারে জন্মের পর পিতা বসুদেব সদ্যজাত সন্তানের প্রাণ রক্ষায় ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাঁকে গোকুলে নন্দলালের আলয়ে রেখে এসেছিলেন। বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণের বাল্য ও যৌবনের লীলাভূমি গোকুল। গোকুলে তিনি গোপিকাকান্ত। অপার প্রেমরসে আচ্ছন্ন করেছিলেন ব্রজকুলবাসীকে।

বৃন্দাবন তাই অতি বিশেষ। উত্তপরদেশের মথুরা জেলার অন্তর্গত বৃন্দাবন। আগ্রা-দিল্লি হাইওয়ে থেকে দূরত্ব ১১ কিলোমিটার।

সংস্কৃত ভাষায় ‘বৃন্দা’ মানে তুলসী, আর ‘বন’ অরণ্য। অনুমান তুলসী বনের আধিক্য থেকেই এই ভূমির নাম হয় বৃন্দাবন। যমুনার তীরে প্রাচীন লোকভূমি এখন পুরোদস্তুর শহর। হিন্দুদের অবশ্যগামী তীর্থ।

mathuraprepation_b_28 (1) (1)

প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি মন্দির আছে বৃন্দাবননগরীতে। সারাবছর কৃষ্ণপ্রেমী মানুষের ভিড়ে ভরে থাকে। কৃষ্ণনাম আর ভজনে মুখর হয়ে থাকে আকাশবাতাস। জন্মাষ্টমীর সময় তো কথায় নেই। পালটে যায় পুরো নগরীর চেহারা। জন্মাষ্টমীর নির্ধারিত দিনের ৮-১০ দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসব। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে ভক্তরা আসে। কৃষ্ণের বিভিন্ন লীলা ও জীবন আলেখ্য নাচ, গান, নাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে তুলে ধরেন শিল্পীরা।

বাঁকেবিহারী মন্দির,  রঙ্গনাথজী মন্দির, শ্রীকৃষ্ণ-বলরাম মন্দির, রাধারানীমন্দির, ইস্কোন মন্দির এই সমস্ত মন্দিরগুলি হয়ে ওঠে ভক্ত-তীর্থযাত্রী মূল আগ্রহস্থল। পূজা-আরতি ছাড়াও নানারকম অনুষ্ঠান হয়। শ্রীকৃষ্ণের অভিষেক থেকে শুরু হয় দর্শন।

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী ৫ হাজার বছর আগে বৃন্দাবনের মধুবনে গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা রচনা করেছিলেন গোপিকাকান্ত। শোনা আজও তিনি ফিরে আসেন মধুবনে। জন্মাষ্টমীতে বিশেষ উৎসব হয় এই মন্দিরে।

কৃষ্ণাষ্টমীর গুরুত্বপূর্ণ পর্ব অভিষেক। মন্ত্রোচারণের শ্রীকৃষ্ণকে দুধ, দই, মধু ইত্যাদী দিয়ে স্নান করানো হয়। তারপর হয় রাজবেশ। নতুন পোশাক এবং অলংকারে সাজানো হয় তাঁকে। অভিষেকপর্ব দর্শনার্থীদের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Janmashtami in Dwarka (1)

বৃন্দাবনের পাশাপাশি মথুরাতেও সাড়ম্বরে পালিত হয় জন্মাষ্টমী তিথি। তীর্থযাত্রীরা অনেকেই মধুরা দর্শন করে বৃন্দাবনে আসেন। মথুরাই কৃষ্ণের আসল জন্মস্থান মথুরার অধিপতি কংসের কারাগারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। মথুরায় এই দিন একটি বিশেষ প্রথা প্রচলিত আছে। কাঠের দোলায় বালগোপালের মূর্তি রেখে দোলায় টান দেওয়া হয়। দোলা দুলতে থাকে। সঙ্গে চলে ভগবত গীতা পাঠ।  জন্মাষ্টমীর দিন নৃত্য-গীত সহযোগে রাসলীলাও উদযাপন করা হয়। মধ্যরাতে আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে উৎসব। জন্মাষ্টমীর রাতে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল সেই মুহূর্তের স্মরণে উচ্ছ্বাসে মাতে ভক্তরা। মথুরায় কৃষ্ণের প্রায় ৪০০ মন্দির আছে। আলোক মালায় সেজে ওঠে সব মন্দির। কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হয় গোটা শ্যামভূমি। গোটা পৃথিবীর সেরা জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয় এখানেই।  

মথুরা আর বৃন্দাবন দু’জায়গাতেই ‘দহি হান্ডি’ পর্ব নিয়ে থাকে তুমুল উত্তেজনা। কে আগে পৌঁছতে পারবে দইয়ের হাঁড়ির কাছাকাছি সেই নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় শ্রীকৃষ্ণকে। মন্দিরের পাকশালায় তো বটেই মন্দির চত্বরেও ভক্তরা স্বহস্তে ভোগ রান্না করেন প্রিয় প্রভুর জন্য।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...