পুণ্যভূমি পুরুলিয়া

বাংলায় প্রাচীন জৈন সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল পুরুলিয়া।

আদি-মধ্য যুগ থেকেই পুরুলিয়া অঞ্চলে জৈন সম্প্রদায়ের বাস। মধ্য এবং উত্তর ভারত জলপথে এসেছিলেন বাংলায় এসেছিল তারা। বঙ্গোপসাগর হয়ে দামোদর, কংসাবতী, সুবর্ণরেখা, শিলাবতীতে বাণিজ্যতরী চলত। এই জলপথে দিয়ে এসেছিলেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। উদ্দ্যেশ্য ছিল বাণিজ্য। সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে জৈন ধর্মের প্রচার করা।

জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর নিজেও ষষ্ঠ শতকে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন। তার ঐতিহাসিক প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। আচরঙ্গ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দীক্ষা গ্রহণের পর চতুর্মাস তিনি অতিবাহিত করেন পনীতভূমিতে যা রাধ প্রদেশের অংশ। রাধে প্রদেশ বলতে যে ভূ-খন্ডের কথা বলা হচ্ছে তা ছোটনাগপুর এবং গঙ্গার ব-দ্বীপ এবং পূর্ব  অংশের সঙ্গে সংযুক্ত অঞ্চল। যা বোঝায় রাধপ্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড এবং বিহারের সঙ্গে যুক্ত।

রাঢ়ভূমে জৈন ধর্মের প্রভাব এতটাই ছিল যে পাহাড়ের নামকরণ করা হয় জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের নাম অনুসারে। তিনি মহাবীরের পূর্বসুরী ২৩তম তীর্থঙ্কর। পরেশনাথ পাহাড়ে মোক্ষলাভ করেছিলেন বলে পাহাড়ের নাম হয় পরেশনাথ পাহাড়।

অহিংসবাদী জৈন ধর্ম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল, শুধু তাই নয় বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে গিয়েছিল।লোক সংস্কৃতি এবং লোককথার বহু অনুসঙ্গে জৈন ধর্মের ছোঁয়া পাওয়া গিয়েছে। ধনী ব্যবসায়ীদের অর্থানুকুল্যে জৈন দেউল গড়ে ওঠে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে।

নবম থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত পুরুলিয়াতে জৈন ধর্মের প্রবাহ মুক্তধারায় বহমান ছিল। ধনী বণিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে বহু জৈন মন্দির গড়ে ওঠে।

পুরুলিয়ার দেউলঘাটা, আড়শা, ছর্‌রা, পাকবিড়্‌রাসহ প্রায় কুড়িটিরও বেশি গ্রাম থেকে জৈন দেউল এবং তীর্থঙ্কর মূর্তির ধংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...