চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল ফরাসীদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে

জগদ্ধাত্রী বা জগদ্ধাত্রী দুর্গা হিন্দু শক্তি দেবী। ইনি দেবী দুর্গার অপর রূপ। উপনিষদে এঁর নাম উমা হৈমবতী। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

বঙ্গদেশে, বিশেষত নদীয়া এবং হুগলীতে জগদ্ধাত্রী পুজো অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়।

নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজো আরম্ভ করেন।

কথিত আছে, নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের  কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। নজরানা দিতে অক্ষম হলে নবাব রাজাকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) নিয়ে যান।  কারাবন্দী থাকার কারণে দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা।

কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিজয়া দশমীর দিনে নৌকায় ফেরার পথে তিনি সিংহবাহনা এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় কার্তিক শুক্লা নবমীর সময় জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজোর আয়োজন করার জন্য।

যথাবিহিত আয়োজনে তিনি জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন। পরে তিনি তাঁর  বিভিন্ন স্থানে এই পুজোর প্রচলনে উদ্যোগী হন। এই সূত্রেই তাঁর দেওয়ান দাতারাম সুর চন্দননগরের দক্ষিণে ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি বা গরুটি গ্রামের বাড়িতে ১৭৬২ সালে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। 

রাজা নিজে নাকি দাতারাম সুরের বাড়ির পুজোয় উপস্থিত হয়েছিলেন।  তবে  এই তথ্যের বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল ফরাসীদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত দিয়েই। চন্দননগরের চাউল পট্টি এলাকায় ইন্দ্র নারায়ন চৌধুরীর বাড়ী এবং তার চালের গুদাম এর কাছে এই পুজোর সূচনা হয় প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে। ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নদীয়া রাজবাড়ির পুজো দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। এখনও পর্যন্ত পুরুষানুক্রমে দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামে পুজোর সংকল্প হয়।

 বারোয়ারী রীতিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর রেওয়াজ শুরু হয় ১৭৯০ সালে। চন্দননগরের প্রধান বাজার এলাকা লক্ষ্মীগঞ্জের চাউলপটিতে স্থানীয় চালের ব্যবসায়ীরা এই পুজো আরম্ভ করেন। আর একটি মত বলে ১৭৬৮তে বারোয়ারী জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু।

চন্দননগরের দুটি প্রাচীন পুজো বাগবাজারের  এবং আদি হালদারপাড়ার। বাগবাজারের পুজো শুরু হয় ১৮৩৪ সালে।  

ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে চন্দননগর বা ফরাসডাঙ্গার লক্ষ্মীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সে সময় আর্থিকভাবে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ছিল। তাই কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব নিয়েই তাঁরা রাজবাড়ির পুজো বনাম বারোয়ারী পুজোয় মেতে ওঠেন।   

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে উৎসবের ধরন। কিন্তু জগদ্ধাত্রী পুজোর আড়ম্বর,উৎসাহ আজও অম্লান। বহু মানুষের সমাগম হয় উৎসবকে ঘিরে। আলোক সজ্জায় তাক লাগিয়ে দেয় সারা বিশ্বকে।

চন্দননগরের কিছু বিখ্যাত পুজোগুলো,  বাগবাজার চৌমাথার পুজো, বিদ্যালঙ্কা, উত্তরাঞ্চল সার্বজনীন ,পালপাড়া,হেলাপুকুর ধার, বড়কালীতলা, বড় বাজার, গোন্দলপাড়া মনসাতলা,  তেমাথা আরও অজস্র পুজো আছে চন্দন নগর, মানকুন্ডু, ভদ্রেশ্বর জুড়ে।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...