তিনি বাঘা রাঁধুনি। তিনি ফ্যাশন নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। নিজের সম্বন্ধে তিনি বলেন, ‘আমি ফুটপাত থেকে স্টার হয়ে উঠে এসেছি’।
অবশ্য পর্দায় ‘স্টার’ হওয়ার অনেক আগেই তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন মানুষের মনে।
প্রথমে জয়কিষান কাকুভাই। পরে ‘জগগুদাদা’। তারও পরে তিনি বলিউড স্টার জ্যাকি শ্রফ।
ডার্ক-টল-হ্যান্ডসাম বলিউড ‘হিরো’। চোখের ভাষাতেই মাত হয়ে যায় দর্শক। সে নয় পর্দায় হল, কিন্তু জ্যাকির বড় হয়ে ওঠাও যেন ‘মশালা’ ফিল্মের এক টানটান চিত্রনাট্য।
বাবা ছিলেন জ্যোতিষী। ছোটবেলায় ছেলের কপাল দেখে বলেছিলেন তারকা ভাগ্যে জন্ম এ ছেলের। তবে জীবনটা কিন্তু তেমন ঝলমলে হয়ে শুরু হয়নি। ছোট দেখেই কাঁধে দায়িত্ব।
নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি আর এমন কি! আসল ‘জগগুদাদা’ তো ছিলেন তাঁর দাদা। মানুষের বিপদে-আপদে দৌড়ে যেত। সেটাই জীবন। মুম্বইয়ের বস্তিতে বস্তিতে ঘুরত। ভূমিকাটা রবিন হুডের মতো। কিন্তু খুব কম বয়সে জলে ডুবে মারা যায় সেই দাদা।
এক শিশু ভেসে গিয়েছিল সমুদ্রে। তাকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দিয়েছিল জ্যাকির দাদা। সাঁতার জানত না। জ্যাকিও তখন খুদে শিশু। দাদাকে ডুবতে দেখে একটা দড়ি ছুঁড়ে দিয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি।
চোখের সামনে বড় ভাইয়ের মৃত্যু রাতারাতি বদলে দিয়েছিল জয়কিষান কাকুভাইকে। দাদার পথেই পা বাড়িয়ে মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছিল। সেই থেকে তিনি ‘জগগুদাদা’। দুর্গত মানুষ আর বলিউড দুই জায়গাতেই এই তাঁর আদরের ডাক নাম।
একটা সময় ছবির বাছবিচার করতেন না। টাকার জন্য সবেতেই রাজি। সেই টাকা যেত মানুষের সেবায়। রান্নাটা প্যাশন। মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে ‘শেফ’ হয়ে হাত পাকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথাগত ডিগ্রি না থাকায় সার্টিফিকেট অধরা। তবে তাঁর হাতের ‘বেগুন কা ভর্তা’ বলিউড চেটেপুটে খায় আজও।
এয়ার ইন্ডিয়ায় চাকরির চেষ্টা করেছিলেন। সেখান থেকে বাতিল হয় আবেদন। কিন্তু তারপরই রাতারাতি ঘুরে যায় জীবন। বরাবর তিনি ফ্যাশনদুরস্ত। ভিড়ের মাঝেও চোখ টেনে নেওয়া উপস্থিতি। একদিন বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ একজন লোক এসে বলল, ‘মডেলিং করেগা?’
জ্যাকির তখন আয় বলতে কিচ্ছু নেই। মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে যায়, ‘প্যায়সা দেগা ক্যায়া?’ এবার আর বাতিল হতে হয়নি। এরপরের জার্নিটা হাজার ওয়াটের আলোয় উজ্জ্বল...১৩ টি ভাষায় প্রায় ২২০-র বেশি ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এখনও সে যাত্রা অব্যাহত।
তারকা হয়েও জ্যাকি ভোলেননি তাঁর নিজের শুরুর জার্নি। নিজের ছোটবেলা। মহল্লা-গলির গরিব আর্ত মানুষদের। আজও তিনি তাঁদের জন্য ভালোবাসার ‘জগগু দাদা’।
আজ তিনি ৬৪ বছরে পা দিলেন।
শুভ জন্মদিন জ্যাকি!