কৃত্রিম চিনি কি ভাল?

আগে জিজ্ঞেস করা হয় ‘ক চাকমচ’। এখন জিজ্ঞাসা করা হয় ‘ক দানা’।

বাড়িতে অতিথি এলে চা-কফিতে ক’চামচ চিনি দেবেন কর্ত্রী, জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ছিল চেনা দস্তুর। এখন এই রেওয়াজ বদলেছে। চামচের বদলে এসেছে দানা। দানা মানে আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনারের কিউব বা দানা। তরলে মেশাবার আগে অতিথিকে জিজ্ঞেস করে নিতে হয় ক দানা মিশবে।

আজকাল অনেক বাড়িতেই বদলে গিয়েছে চিনির কৌটো। আজ বলে নয়, অনেকদিন থেকেই। বাড়িতে মধুমেহর রোগী থাকলে তো কথাই নেই এমনি বাকি সদস্যরাও চিনির বদলে নকল চিনিতেই অভ্যস্ত করে তুলছেন নিজেদের।

ডায়েট মেনে চলতে গেলে এড়িয়ে চলতে হবে চিনি- এমন ফতোয়া, বলা ভাল বাজার চলতি ধারনা থেকেই যেন আরও বেশি করে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিনে জায়গা করে নিয়েছে কৃত্রিম চিনি। চিনি-সরবত হোক বা মিষ্টি কেনার আগে জিজ্ঞাসা করে নিতে হয় চিনি না সুগার-ফ্রি!

দিনদিন ডায়েবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে স্থুলত্বের সমস্যাও। মধুমেহ আক্রান্ত হলে মানে মিষ্টি স্বাদ বাতিল হয়ে গেল জীবন থেকে। তাই রোগীরা তো বটেই সাধারণ মানুষও রোগ এড়াতে চিনির বদলে নিজে থেকেই বেছে নিচ্ছেন আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার বা কৃত্রিম চিনি।

ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে পাওয়া যায় বহু ধরনের আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার। চা-কফির মতো তরল পানীয় ছাড়াও মিষ্টি, এবং মিষ্টি স্বাদের অন্যান্য খাবার তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু কতটা নিরাপদ এই আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনারের ব্যবহার?

আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনারের বিশেষত্ব হল এতে মিষ্টির স্বাদ থাকবে, কিন্তু ক্যালোরির বেড়ে যাওয়ার চাপ থাকবে না। তার কারণে মন ভরলেও সুগার ও ওজন বৃদ্ধির ভয় নেই। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছে। ল্যাবরেটারি টেস্টে দেখা গিয়েছে আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার ব্যবহার করলে মোটেই কিন্তু ওজন কমে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটারও সম্ভাবনাও থেকে যায়।

রোজ রোজ আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার  খেয়ে খেয়ে মিষ্টি খাবার ঝোঁক এম বেড়ে গেল যে তখন আর কোনও কিছুরই খেয়াল থাকল না, এক সঙ্গে গোটা দশেক রসগোল্লা সাবাড়! তখন বাড়তি ওজনের আর দোষ কী!

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার খেয়ে সুগার কমবে এমন আশ্বাস থাকে না। মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে নিয়ম মেনে জীবন আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ-চিকিৎসা এই একমাত্র উপায়।

সেভাবেই বিশেষজ্ঞ মত বলছে, আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার খেলাম আর ওজন কমে গেল এমনটা ভুল ধারণা, ওজন কমতে হলে আপনাকে করতেই হবে শারীরিক কসরত।

তাই দিনের শুরুতে এক চামচ চিনি দিয়ে এক কাপ চা বা কফিতে ধাক্কা আসবে না আপনার ওজনে, বরং হতেই পারে মনের মতো দিনের শুরু। যারা নেহাত শখে বা অতি সচেতনতায় আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার ব্যবহার ভেবে দেখতেই পারেন আর একবার…।      

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...