“জিন্দেগি ছোটে নেহি হোতি
লোগ জিনা হি দেরি সে শুরু করতে হ্যায়
জব তক রাস্তে সমঝ আতা হ্যায়
তব ত্যাক লৌটনে কা ওয়াক্ত হো জাতা হ্যায়”
বড় স্পষ্ট ছিল চোখদুটো। ভাসা ভাসা দৃষ্টি। যেন জলের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই দীঘি-ঘোর-দৃষ্টি দিয়েই জীবন দেখতেন তিনি। তাই প্রতিটা মুহুর্ত উদযাপনের। জন্মদিনে উৎসব করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদেরকেও সে কথাই বোঝাতে চাইতেন। একটা জন্মদিন পার হয়ে যাওয়া মানে মৃত্যুর আরও খানিকটা কাছাকাছি চলে আসা। মানুষটির নাম ইরফান।ইরফান খান।
এমন সন্ত চোখের মানুষ আগে আর কখনও দেখেনি বলিউড। তাদের চেনা নিয়মগুলো যে মানুষটার কাছে অচল। চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে ফাঁপা, সাজানো ভালো থাকার দিকে।
নায়কের সাজ গায়ে তুলেও আশ্চর্য নির্লিপ্ত। বিপরীত জীবনযাপনের নিভৃতিতে। বহুমূল্য বিদেশী পারফিউমের গন্ধ নেই সেখানে, বরং সে জীবন সুরভিত নিরিবিলি পদ্মের সৌরভে।
ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতেন একসময়। লম্বা উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছিলেন পেস বোলার। কিন্তু মা যে বেজায় কড়া। খেলার আগে জরুরি পড়াশোনা। আর কেরিয়ার। জন্ম শহর জয়পুরে ভোকেশনাল ট্রেনিং নিয়েছিলেন। সেই বিদ্যেকে কাজে লাগিয়ে একসময় চলে আসেন মুম্বই। এসি-সার্ভিসিং-এর কাজ করতেন।
এসি সারাতে গিয়েই একবার দেখা হয়ে গিয়েছিল ভারতের সেরা সুপারস্টারের সঙ্গে। রাজেশ খান্নার বাড়িতে এসি সারাতে গিয়েছিলেন ইরফান।
অভিনয়ের প্রতি টান এসেছিল মামাকে দেখে। ইরফানের মামা ডাঃ সাজিদ নিসারকে দেখে। থিয়েটারে অভিনয় করতেন। তাঁর ছোঁয়াতেই অভিনয়ের নেশা তৈরি হয়ে গিয়েছিল ছোট্ট ইরফানের।
একবার যোধপুর টাউন হলে মামার শো ছিল। খুদে ইরফান এসেছিলেন সেই শো দেখতে। সেই প্রথমবার সামনে থেকে থিয়েটার দেখা। শো শেষ হয়ে গেলে পরের দু’দিন সারাক্ষণ লেপ্টে ছিলেন মামার সঙ্গে। একটার পর একটা প্রশ্নে জেরবার মামা। “অত লোকের সামনে তুমি স্টেজে, তোমার ভয় করেনি?”… “কী করে ভয় লুকিয়েছিলে তুমি?”…
অভিনয় ছিল ইরফানের নিয়তি। জীবনে একটার পর একটা পর্ব বেরিয়ে তিনি কেবল এগিয়ে গিয়েছিলেন সেই নিয়তির ধারে।ইরফান আজও জেগে আছেন। হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেবেন আঙুল। অচেনা বিষাদবালককে লিখে পাঠাবেন কবিতার পথ্য। আজও তিনি হেঁটে চলেছেন প্রিয় গ্রামের পথে পথে...করে চলেছেন অন্য জীবনের খোঁজ...
সিনেমায়...গানে...কবিতায়...শের-শায়রি আর বোধের সরনিতে...জেগে আছেন একা একা...ভেসে যাওয়া নাবিকের কূল ছোঁয়ার বিশ্বাসে...ইরফান আছেন। ইরফান থাকবেন...
"সে চলে গেলেও নদীতে খেলবে চির পরিচিত জোয়ারভাঁটা
চেনা রাস্তায় একলা একলা তারই সঙ্গে আমার হাঁটা।"