ক্যান্সার প্রতিরোধে কেমোথেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রচলিত ধারণা ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে শুরু হলে রোগীর শরীরে নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু এখন অনেক ধরনের কেমোথেরাপি রয়েছে যেগুলি প্রয়োগ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। এই নতুন ধরনের কেমোথেরাপিগুলির সম্পর্কে জানালেন 'সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতাল'-এর চিকিৎসক ডাঃ রাকেশ রায়।
প্র: কেমোথেরাপিতে কী ধরনের নতুন পরিবর্তন এসেছে?
ডাঃ রাকেশ রায়: আগে কেমোথেরাপির মূল সমস্যা ছিল, যে কেমোথেরাপি কখনও ক্যান্সার সেল ও নরম্যাল সেলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই নরম্যাল সেলের ক্ষতি হয়। সেই কারণেই শরীরে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যখন কেমোথেরাপি দেওয়া হয় তখন চুলের গোড়া পাতলা হয় যায়। ফলে চুল পড়তে শুরু করে। মুখের ভিতরে ঘা হয়, তাহলে জ্বালা করে ও খেতে অসুবিধা হয়। অনেকের বমি হয়। খিদে কমে যায়। শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। লোহিত কণিকা ও শ্বেত কণিকা ভীষণভাবে কমে যায়। এই সমস্যাগুলো হয় বলে রোগীর মধ্যে ভীতি জন্মায়। শ্বেত কণিকা কমে গেলে আর কেমোথেরাপি দেওয়া যায় না। তবে এখন কেমোথেরাপিতে অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। এখন অনেক ধরনের ড্রাগস চলে এসেছে যা, শ্বেতা কণিকা ও লোহিত কণিকা যাতে কমে না যায় তার জন্যে বেশ কিছু ওষুধ চলে এসেছে। ইনজেকশনের মাধ্যমে সেগুলি শরীরে প্রয়োগ করলে কেমোথেরাপির দেওয়ার পর শ্বেতা কণিকা ও লোহিত কণিকা কমে যায় না। এছাড়াও এমন কিছু কেমোথেরাপি রয়েছে যা ঠিক ক্যান্সারের সেলগুলোকেই ধ্বংস করে বাকি সেলগুলোর কোন ক্ষতি করে না। এই ধরনের কেমোথেরাপিকে অ্যাকুরেট কেমোথেরাপি। আরও দুই ধরনের কেমোথেরাপি রয়েছে একটি হল টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিনো থেরাপির। ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও জিন বা প্রোটিনের ঘাটতি বা বাড়বাড়ন্ত দেখতে পাওয়া যায়। এই ধরনের প্রোটিনকে যদি আমরা কিছু ভাবে আটকাতে পারি, তাহলে মলিকিউলার লেভেলে আমরা ক্যান্সারটাকে আটকাতে পারবো। এই জন্যেই টার্গেটেড থেরাপির প্রয়োগ করা হয়। টার্গেটেড থেরাপির ট্যাবলেট বেরিয়ে গিয়েছে। যার ফলে রোগীরা বাড়িতে বসেই এই ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্যেই ইমিনো থেরাপি ব্যবহার করা হয়। ক্যান্সারের প্রতিরোধে কার্যকর এই থেরাপি। মানুষ যদি ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করেন তাহলে সাইড এফেক্ট দেখা দেবে না। তবে টার্গেটেড থেরাপি বা ইমিনো থেরাপির ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পরেই প্রয়োগ করতে হবে।
প্র: অর্থের অভাবে অনেকেই ক্যান্সারের চিকিৎসা চালাতে পারে না। তাদের জন্যে 'সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতাল' কী সুবিধা এনেছে?
ডাঃ রাকেশ রায়: 'সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতাল' একটি প্রাইভেট ইনস্টিটিউট। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন ওর্গানাইজেশনের টাইআপ আছে। স্বাস্থ সাথী, ই.এস.আই ছাড়াও বেশি কিছু বেসরকারি স্কিমের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তবে স্কিম না নিলেও অনেক কম খরচে কেমোথেরাপি দিয়ে থাকি। রোগী যদি দুটো কেমো নেন তাহলে তৃতীয়টি আমারা বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। বেড ভাড়াও যথেষ্ট কম। যাদের খুব আর্লি স্টেজে ক্যান্সার ধরা পড়েছে তাদের সারিয়ে তোলার মতো চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের এখানে।
প্র: নতুন কী কী চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে হাসপাতালে?
ডাঃ রাকেশ রায়: নতুন একটা ফার্মাসি খোলা হয়েছে যেখানে দেশি ও বিদেশি সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যাবে। কোনও কারণেই যাতে রোগীর ট্রিটমেন্ট আটকে না যায় তার জন্যে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।