বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ অয়ন দেব মৌলিক। টেলি কেরিয়ার শুরু অনেক দিন আগে। প্রথম কাজ ‘পুনরুত্থান’, এরপর 'লাবণ্যর সংসার'। এরপর থেকে একের পর এক ধারাবাহিকে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু এই মুহূর্তে শুধুই বিলিতি বাবুদের চরিত্রের জন্য তাঁর সমাদর বেশি।
ধারাবাহিকে কোনও বিদেশি চরিত্রের প্রয়োজন হলেই পরিচালক- প্রযোজকেরা অয়নের কথা স্মরণ করেন। ব্যাপারটা অয়নের ভাল লাগলেও একটা আক্ষেপ তিনি শেয়ার করলেন জিয়ো বাংলার সঙ্গে। অয়ন বলেন-
আমার গায়ের রঙের জন্যই আমাকে বিদেশিদের চরিত্রে নেওয়া হয়। আমি একজন বিলিতি বাবুর চরিত্রে অভিনয় করতে পারব সেই বিশ্বাসও রাখেন পরিচালক- প্রযোজকেরা। এর জন্য আমি খুশি। তবে হ্যাঁ, অন্য চরিত্রেও আমি কাজ করতে পারি। আমি আগেও করেছি। রং বা চেহারাটাই চরিত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হবে এই ব্যাপারটাতে আমার আপত্তি আছে। একজন ফর্সা মানুষকেও মেক আপের মাধ্যমে মিশমিশে কালো করে দেওয়া যায়। আবার একজন কৃষ্ণবর্ণের মানুষকেও ফর্সা করে দেওয়া যায়। তাই গায়ের রং বা ফিগার নয়, অভিনয়ের দখলটাই চরিত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচনার বিষয় হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি সাহেব সুবেদারের পাশাপশি নানা ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাই। শুধু সাহেব হয়ে থাকতে চাই না।
রবি ওঝার ‘খেলা’ ধারাবাহিকে এক মেধাবি ছাত্রের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পরে সে পুলিশ অফিসার হয়। অয়ন তখন সবে ক্লাস ইলেভেনে পড়তেন। এরপর অগ্নিপরীক্ষা, জয় বাবা লোকনাথ, সাধক বামাক্ষ্যাপা, রানী রাসমণী, দেবী চৌধুরানী, ভানুমতীর খেল ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এগুলির মধ্যে জয় বাবা লোকনাথ, সাধক বামাক্ষ্যাপা, রানী রাসমণী, দেবী চৌধুরানী, ভানুমতীর খেল-এ সেই সাহেব সুবেদারের চরিত্রেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। আর এই মুহূর্তে ‘নেতাজি’ ধারাবাহিকে অত্যাচারী, নিষ্ঠুর ব্রিটিশ শাসক রিচার্ডসনের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাঁকে। আদ্যোপান্ত নেগেটিভ ক্যারেক্টার এই রিচার্ডসন, যে শিশুদের উপর অত্যাচার করতেও পিছপা হয় না।
অয়ন জানান, আমাকে এই সাহেব সুবেদারের চরিত্র হিসেবে প্রথম আবিষ্কার করে সুব্রত রায় প্রোডাকশন। আর এই চরিত্র করে আমি বেশ সমাদর পাচ্ছি আজ। তাই আমি টিম এস আর পি’র কাছে কৃতজ্ঞ।
‘নেতাজি’ ধারাবাহিকে সুভাষের সঙ্গে বনিবনা নেই রিচার্ডসনের। কিন্তু অফস্ক্রিনে দুজনের ভারী বন্ধুত্ব। নেতাজি অর্থাৎ অঙ্কিতের ভূয়সী প্রশংসা করলেন অয়ন। এই মুহূর্তে রিচার্ডসনের ট্র্যাক কদিন বন্ধ আছে। দিন কয়েক পরে আবার শুরু হবে রিচার্ডসনের দাপট। তাই শুটিং-এ না যাওয়ার ফলে আজকাল দেখা হচ্ছে না তাঁর অঙ্কিতের সঙ্গে। তাই মনটা খারাপ অয়নের। নিজেই জানিয়েছেন- “আমি যেমন অঙ্কিতকে মিস করছি; আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেও আমাকে মিস করছে।”
রিচার্ডসন চরিত্র প্রসঙ্গে একটি মজার ঘটনা তিনি শেয়ার করলেন জিয়ো বাংলার সঙ্গে। বললেন-
আমাদেরই এক আত্মীয়র বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছি, আমারই এক আত্মীয়র বাচ্চা মেয়েটা আমাকে দেখে ভয় পেয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিল। পরে আমি তাকে আদর করে কাছে ডেকে বোঝাই আমি অতটা খারাপ নই। রিচার্ডসন একটা চরিত্র, একটা খেলা। এরপর আমার সঙ্গে ওর দারুণ বন্ধুত্ব জমে জায়। একটা চরিত্র যে একজন অভিনেতাকে কত ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে তা এই ঘটনা থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।
ধারাবাহিকে অভিনয়ের পাশাপাশি অয়ন চুটিয়ে নাটক করেন। ছবি আঁকতেন ছোটবেলায়। আর তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। ছোট থেকে নানা ধরনের বন্দুক আঁকতে ভালবাসতেন। এরপর জীবন গেল বেঁকে। আজ তিনি টেলিভিশনের ব্যস্ত অভিনেতা। কয়েকটি ছবিতে কাজ করলেও সেগুলি রিলিজ হয়নি। তাই মনটা ভেঙে গিওয়েছিল অয়নের। ভেবেছিলেন সরে আসবেন অভিনয় থেকে। কিন্তু শিল্পীমন। সরে আসা কি অতই সহজ? তাই তো অয়ন বললেন- “অভিনয় আমাকে ছেড়ে গেলেও আমি অভিনয়কে ছেড়ে কোথাও যাব না। অভিনয় আমার প্রাণভোমরা।”