নেপালের তিহার উৎসবে কুকুরই দেবতা

মহাভারতের মহাপ্রস্থানিক পর্ব। মহাভারতের ক্ষুদ্রতম অধ্যায়।  পঞ্চ পাণ্ডব আর দ্রৌপদী চলেছেন হিমালয়ের পথে। মরুৎ পর্বত থেকে স্বর্গদুয়ার অভিমুখে। পথের মধ্যে তাঁদের সঙ্গী হন এক সারমেয়। সবার আগে প্রাণ হারালেন দ্রৌপদী। মধ্যপথে চার পান্ডব। বাকি পথে যুধিষ্ঠির কেবল একা। নির্জন বন্ধুর পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন। ভাইদের মৃত্যুর পর রথে চেপে ইন্দ্র এলেন যুধিষ্ঠিরের কাছে। তাঁকে রথে ওঠার প্রস্তাব দিলেন। যুধিষ্ঠির জানালেন যে পথে তাঁর সহোদরা এবং স্ত্রী আছে, তাদের ফেলে তিনি রথে উঠবেন না। তখন দেবরাজ বললেন, তারা সকলেই প্রাণত্যাগ করেছে। কিন্তু তবুও রাজি হলেন না জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব। তিনি তাঁর সঙ্গী সারমেয়টিকে ছাড়া কখনও রথে উঠবেন না। সেও তাঁর পথসঙ্গী। ইন্দ্র রাজী হলেন না। তিনি বললেন, যাঁর সঙ্গে কুকুর থাকে তিনি স্বর্গে যেতে পারেন না। কিন্তু যুধিষ্ঠিরকে টলানো গেল না। তিনি পাল্টা যুক্তি দিলেন, ‘শরণাগতকে ভয় দেখানো, স্ত্রীবধ, ব্রহ্মস্বহরণ ও মিত্রবধ এই চার কার্যে যে পাপ হয় ভক্তকে ত্যাগ করলেও সেই পাপ হয় তাই তিনি ভক্তকে ত্যাগ করবেন না। তখন কুকুররূপী ভগবান ধর্ম নিজ রূপ ধারণ করলেন। যুধিষ্ঠিরকে জানালেন, স্বর্গে তাঁর তুল্য আর কেউ নেই। তিনি স্বশরীরে স্বর্গে যাবেন এবং অক্ষয়লোক লাভ করবেন।

 মানুষ আর কুকুরের সম্পর্কের সেই থেকেই ‘ তেরি মেরি কহানি’। অবিচ্ছেদ্য তার বন্ধন।

কথায় আছে, সব কুকুরেরই নাকি একদিন দিন আসে।নেপালে এ কথা সবসময় সত্যি। পোষ্য হোক বা রাস্তার কুকুর, তাদের জন্য  একটা গোটা উৎসবের দিন। উৎসবের নাম কুকুর তিহার আলোর উৎসব দেওয়ালির পরের দিনটি পালিত হয় এই  উৎসব। 

‘তিহার’ অর্থে উৎসব, ‘কুকুরদের উৎসব’।নেপালীদের কাছে এই দিন ওরা তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু ও অভিভাবক কুকুরদের সম্মান জানান। কুকুর, সে রাস্তার হোক আর বাড়ির- সবার গলায় জড়িয়ে থাকে হলুদ গাঁদা মালা। কপালে লাল সিঁদুরের টীকা। চোখে মালিকের প্রতি সমুদ্র সমান ভালোবাসা।

হিন্দু ধর্ম মতে, মৃত্যুর দেবতা যম রাজের দূত কুকুর। নেপালের মানুষের বিশ্বাস কুকুরকে দেখভাল করলে যম রাজের সুনজরে পড়া যেতে পারে। এড়ানো যায় মৃত্যু। দীর্ঘ জীবন লাভ হয়। ভারতে দীপাবলী-র পিঠোপিঠি এই উৎসবে কুকুরদের পাশাপাশি গরু ও কাকদের পূজো করা হয়। সন্ধ্যায় পূজিত হন দেবী লক্ষী। কাছের মানুষদের উপহার দেওয়া নেওয়া  চলে।

কুকুরদের পছন্দের খাবার তাদের ওইদিন মাতিয়ে রাখা হয়। ডিম, দুধ,চীজ, মাংস, ফল, কুকিস থাকে সেই তালিকায়। ঋগ্বেদে আছে, কুকুরদের জননী ‘সামসারা’ দেবরাজ ইন্দ্র কে সাহায্য করেছিল তাঁর হারিয়ে যাওয়া গবাদি পশুর পাল খুঁজে দিতে।

ভৈরব- দেবাদিদেব মহাদেব এর এক অবতার। তাঁর বাহনেও কুকুর। যম পুরীর দ্বার রক্ষকও দুই কুকুর। নেপালীদের এই উৎসব পশুপ্রেম ও মানবতার এক অন্যতম উদাহরণ।

দেশের সীমানা পেরিয়ে ধরা দিয়েছে এই উৎসব। ২০১৬ সালে মেক্সিকো পালন করেছিল ‘কুকুর তিহার’।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...