পরিবেশ বান্ধব কিচেন গার্ডেন

এখন চারদিকে যেভাবে ভেজাল ছেয়ে গেছে, তার প্রভাব পড়ছে আমাদের জীবনে, যাপনে। বিভিন্ন রকম অসুখের শিকার হচ্ছি আমরা। সবজি থেকে ফল, সবকিছুই খাচ্ছি প্রচুর পরিমান রাসায়নিক সার সহ। কিন্তু এইভাবে চলতে চলতে আমরা হারিয়ে ফেলছি নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই রকম ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে ৬২ বছরের ভাবনা শাহ নিজের বাড়িতেই একপ্রকার চাষাবাদের জায়গা করে ফেলেছেন। মুম্বইতে ব্যস্ত সমস্ত জীবন কাটানোর পর ভাবনা এবং তার স্বামী নীতিন প্রচন্ড শোরগোল এবং দূষণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। তাই সেখানকার কোলাহলপূর্ণ জীবন ছেড়ে আহমেদাবাদে তুলনামূলক শান্ত এলাকায় বাকি জীবন কাটানোর পরিকল্পনা করেন। আট বছর আগে তাঁরা আহমেদাবাদে আসেন।

     শুধু আহমেদাবাদে বাড়ি করাই নয়, তাঁরা নিয়েছিলেন আরও একটি সিদ্ধান্ত। বাকি জীবন আর রাসায়নিক খাবার দাবার এর ওপর নির্ভর করে থাকবেন না। তাই গোটা বাড়িটাই হয়ে উঠেছে একটা ইকোফ্রেন্ডলি এলাকা। বৃষ্টির জল জমিয়ে রেখে বিভিন্ন রকম সবজির চাষ করেন ভাবনা। প্রায় ২০০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন কিচেন গার্ডেন। ২০টির ও বেশি প্রজাতির শাক, সবজি, ফল উৎপন্ন করেন সেখানে তিনি। যেটা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, তা হল সেই বাগানে একফোঁটাও রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয়না। নিত্যদিনের সবজি, ফল যাই খান না কেন, তাঁদের বাগান থেকেই তা সংগ্রহ করেন। ভাবনা আরও জানান, তিনি তাঁর এই বাগানে কোনোকিছুই অফ সিজনে চাষ করেননা। সবজি বা ফল যাই হোক না কেন, তা তিনি ঋতু মেনেই চাষ করেন। তার ফলে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে এবং ফলন যথেষ্ট ভালো হয়। একবার চাষ করে ফসল তোলার পর মাটি কিছুদিন এমনি ফেলে রাখেন, যাতে তার উর্বরতা পুনরায় ফিরে আসে। এতে শুধুমাত্র যে ফলন ভালো হয় তাই নয়, সবজি বা ফল যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।

এই কিচেন গার্ডেনে টোম্যাটো, বেগুন, লেবু, বাঁধাকপি, পেঁপে প্রভৃতি আরো সবজি ও ফল চাষ হয়। এই বাগানের আরো একটি বিশেষত্ব হল, এখানে বাড়ির সার প্রয়োগ করা হয় বলে রান্নাঘরের কোনো বর্জ্য ফেলতে হয়না বাইরেবৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে সেই জল দিয়েই এই বাগানের জলসরবরাহ হয়

তাছাড়া সেই জল ফিল্টার করে একটি ১০,০০০ লিটারের ট্যাংকে জমা করা হয়। এই ট্যাংকটি আবার একটি হ্যান্ড পাম্পের সঙ্গে যুক্ত করা আছে। যখন প্রয়োজন হয়, সেই হ্যান্ড পাম্প থেকে জল ট্যাঙ্কে ভরে নেন তাঁরা। ট্যাংকটি ট্রান্সপারেন্ট ঢাকনা দিয়ে ঢাকার বন্দোবস্ত করা আছে। গোটা বাড়িতে তাঁরা সোলার এনার্জি লাগিয়েছেন। রান্না হয় সোলার কুকারে, বাড়ির যাবতীয় আলো জ্বলে সোলার সিস্টেমের দ্বারা। তাই আলাদা করে ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করেন না ভাবনা এবং তাঁর স্বামী।

     যদি কখনও প্রয়োজনে বাইরে থেকে সবজি বা ফল কিনতে হয়, তাহলে লেবু এবং কমলালেবুর রসের সঙ্গে জল ও গুড়ের মিশিয়ে একটি সংমিশ্রণে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখেন। তারপর তা ধুয়ে ফেলে খাবার উপযুক্ত করে নেন। ভাবনা কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগে রীতিমতো বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন। কিচেন গার্ডেনিং, ভার্মিকম্পোস্ট, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, মাটির ফলন বৃদ্ধির কৌশল প্রভৃতি সব কিছুই ওয়ার্কশপ করে শিখেছেন তিনি। তাঁর এই জীবনযাত্রার কারনে তিনি ইতিমধ্যেই পরিচিত হয়ে গেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি ওয়ার্কশপ করেন, লেকচার দেন।

তাঁর এই রকম জীবনযাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা তাঁর মেয়েও নিজের বাড়িতে এই রকম ইনঅর্গানিক কিচেন গার্ডেন করেছেন। ভাবনা আশা রাখেন, পরবর্তী প্রজন্মও যেন এগিয়ে আসে এই রকম পরিবেশবান্ধব সবজি, ফল বাড়িতে উৎপন্ন করার জন্য।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...