দু’বছরের একটি শিশু। মস্তিষ্কের রক্তবাহী শিরা মারাত্মক ভাবে ফুলে গিয়েছিল। সেটি একবার ফেটে গেলেই যে কোনও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত শিশুটির। ফলে, চিকিৎসকেরা কোনওভাবেই অস্ত্রোপচারের জন্য দেরি করতে চাননি।
তাই দিনকয়েক আগে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল শিশুটির একটি নতুন সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিল। এদিন শিশুটির মস্তিষ্ক পুরো না কেটে (ওপেন সার্জারি) এন্ডোভাস্কুলার পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা মেহেরান জমাদার। গত অক্টোবরে আচমকাই তার খিঁচুনি হয়। কিন্তু তার গায়ে জ্বর ছিল না। তাই চিন্তিত হয়ে পরিজনেরা তাকে নিয়ে আসেন সিএমআরআই হাসপাতালে।
হাসপাতালে স্নায়ুরোগের চিকিৎসক শিশুটিকে পরীক্ষা করার পরে তার সিটি স্ক্যান করান। এরপরেই পরীক্ষা রিপোর্টে ধরা পড়ে যে শিশুটির মস্তিষ্কের রক্তবাহী শিরায় কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই শিশুটিকে পাঠানো হয় ওই হাসপাতালেরই আর এক স্নায়ুরোগ চিকিৎসক দীপ দাসের কাছে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ওই শিশু এবং তার পরিজনদের উপস্থিতিতে তিনি জানান যে শিশুটিকে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তার মস্তিষ্কের ভিতরে একটি রক্তবাহী শিরা মারাত্মক ফুলে রয়েছে। সাধারণ ফোলা থেকে প্রায় ১০ গুণ বেশি।
এই বিষয়ে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে মাথার বাঁ দিকে থাকা ওই শিরা ফেটে গেলে শিশুটির শরীরের ডান দিকে পক্ষাঘাত কিংবা কথা বলার শক্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই পরিজনদের বিষয়টি বুঝিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যমে চিকিৎসক দীপ বলেন যে শিশুটিকে পুরোপুরি অজ্ঞান করে তার কুঁচকির কাছ থেকে শিরায় প্রবেশ করে মস্তিষ্কে পৌঁছনো হয়। এর পরে একটি ছোট্ট যন্ত্র শিরায় প্রতিস্থাপন করা হয়, যাতে রক্তের প্রবাহ ওই ফোলা জায়গায় না গিয়ে অন্যত্র ঠিক ভাবে সঞ্চালিত হয়। তিনি নিশ্চিত করেন যে এমন অস্ত্রোপচার আগে কখনও হয়েছেন তার জানা নেই।
জানা গিয়েছে যে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে শিশুরোগ চিকিৎসক রুচি গোলাশ, অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক শৈলেশ কুমারের উপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করেন দীপ। অস্ত্রোপচারের পর তিনি আরও জানান যে অন্তত পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ওই শিশুটিকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।