বুথ রুমের মধ্যে ছোট্ট এক চিলতে আড়াল। সেই আড়ালেই চলছে দেশের ভাগ্য নির্ধারণ। একটানা বিপ শব্দ জানিয়ে দেবে সম্পূর্ণ হয়েছেন আপনার ভোটদান। কিন্তু তারপরও বাকি থেকে যায় এক পর্ব।
বসে থাকা নির্বাচন কর্মীর দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে মধ্যমা। কালি দিয়ে দাগিয়ে দেবেন তিনি। প্রথমে কালো পরে বেগুনি কালির দাগ বলে দেবে দেশের দায়িত্ববান নাগরিক আপনি।
ভোট মানেই এই বেগুনি কালির দাগ। এই কালি জলে ধোয়া যায় না। শত চেষ্টাতেও আঙুল ছাড়া হয় না বরং যত রোদ-জল-হাওয়া খায় তত বেগুনি থেকে বাদামিতে রং বদলায়। ভোটের কালিতে সিলভার নাইট্রেট থাকে। সেই সিলভার নাইট্রেট ত্বকের সংস্পর্শে এসে ত্বকের লবণের সঙ্গে মেশার ফলেই এটি এমন বিক্রিয়া করে যা জলে ধোয়া যায় না। ত্বকে লাগানো হলে চল্লিশ সেকেন্ডের মধ্যে এটি প্রায় স্থায়ী ছাপ ফেলে। ভোট প্রতারণা রোধ করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন নতুন দিল্লির ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে (NPL) এই কালি তৈরি করা হয়েছিল। যদিও NPL এর আবিষ্কারের লিখিত রেকর্ড নেই। ১৯৬২ সালে মাইসোর পেইন্টস এবং বার্নিশ লিমিটেড (কর্ণাটক সরকারের একটি উদ্যোগ) লাইসেন্স এবং জ্ঞান স্থানান্তরিত করে এবং তারপর থেকে, MPVL, ভারতের নির্বাচন কমিশনের জন্য এই কালির একমাত্র অনুমোদিত প্রস্তুতকারক।
১৯৬২ সালে ভারতের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথম ভোটের কালি ব্যবহার করা হয়। এক একটি বোতলে ১০ মিলি কালি ধরে। একটি বোতলের কালি ব্যবহার করে প্রায় ৭০০ জনের আঙুলের চিহ্ন দেওয়া হয়।
২০০৬ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন নতুন নিয়মে তর্জনিতে আঙুলের মাঝখান থেকে প্রথম গাঁট পর্যন্ত কালি লাগানো হয়। এর আগে এই কালি তর্জনীর নখ এবং ত্বকে আড়াআড়িভাবে লাগানো হত।
চলতি লোকসভা নির্বাচনে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটের জন্য সর্বোমোট ২৬.৫৫ লাখ শিশি কালি সরবরাহ করবে। খরচ ৫৫ কোটি টাকা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে নির্বাচনে লেগেছিল প্রায় ২৬ লাখ শিশি, খরচ হয়েছিল ৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে এবার ২.২ শিশি বেশি সরবরাহ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ৩.৫৮ লাখ কালি শিশি উত্তরপ্রদেশে পাঠানো হয়েছে। লাক্ষাদ্বীপে পৌঁছেছে ১১০টি কালির শিশি
নির্বাচন কমিশনের মতে, এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি। উত্তরপ্রদেশে রয়েছেন সর্বাধিক ভোটার, ভোটার সংখ্য়া ১৫.৩০ কোটি। অন্যদিকে লাক্ষাদ্বীপে সবচেয়ে কম ৫৭,৫০০ ভোটার রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের পর মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক ২.৬৮ লাখ কালির শিশি পাঠানো হয়েছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গে ২ লাখ কালির শিশি, বিহারে ১.৯৩ লাখ, তামিলনাড়ুতে ১.৭৫ লাখ, মধ্যপ্রদেশে ১.৫২ লাখ, তেলেঙ্গানায় ১.৫০ লাখ, কর্নাটকে ১.৩২ লাখ, রাজস্থানে ১.৩০ লাখ, অন্ধ্র প্রদেশে ১.১৬ লাখ এবং এবং গুজরাট থেকে ১.১৩ লাখ কালির শিশি পাঠানো হয়েছে।
MPVL মালয়েশিয়া, কানাডা, কম্বোডিয়া, ঘানা, আইভরি কোস্ট, আফগানিস্তান, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, নেপাল, মাদাগাস্কার, নাইজেরিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মঙ্গোলিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডেনমার্ক সহ প্রায় ৩৫টি দেশে এই কালি রফতানি করেছে।