দিনের পর দিন রাজ্যে কমে আসছে দেশি গাছের সংখ্যা। তাল, খেজুরের মতো সাধারণ গাছগুলির পাশাপাশি নিম, শিশু, অর্জুন, করমচা, তেঁতুল, বকুলের মতো গাছগুলির সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে আসছে গ্রামাঞ্চলে। রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের জন-জীববৈচিত্র্যের নথি বলছে, কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় নয়, রাঢ় বাংলা থেকে উপকূল, উত্তরবঙ্গ থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সর্বত্রই দেশি গাছের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশি গাছগুলির যেমন কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে, তেমনই শাল সেগুনের মতো দেশি গাছ টিম্বার ভ্যালু বা তাদের উৎকৃষ্ট মানের কাঠের জন্য গুরূত্বপূর্ণ। বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন প্রদান করা ছাড়াও বেশিরভাগ দেশি গাছের পাতা বড় আকারের হওয়ায় তারা বাতাস থেকে বেশী পরিমাণে ধূলিকণা শোষণ করতে সক্ষম। অর্থাৎ দূষণ রোধ করে পরিবেশ রক্ষার্থে বহু দেশি গাছের ভূমিকা অপরিসীম।
সবুজায়নে এমন বৈপরীত্য স্বভাবতই বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণভাবে রাজ্যে সবুজাচ্ছাদনের পরিমাণ বাড়লেও হারিয়ে যেতে বসেছে দেশি গাছগুলি। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পরই রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের বিজ্ঞানীরা। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রাজ্যে ব্লক স্তরের বায়োডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটিগুলিকে এই দেশি গাছগুলির সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
রাজ্যে সামাজিক বনসৃজনের পাশাপাশি ১০০ দিনের বৃক্ষরোপণের মতো সরকারি প্রকল্পের কাজ চললেও দেখা যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে একটা সময় যেসব গাছের দেখা বহুল পরিমাণে মিলত, সেগুলির সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে, এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের জীববৈচিত্র্য পর্ষদের বিজ্ঞানী অনির্বাণ রায়।
১৯৭৭ সাল থেকে সামাজিক বনসৃজনের যে প্রকল্পগুলি চলছে, সেখানে ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি জাতীয় গাছগুলি রোপণের ক্ষেত্রেই বেশী জোর দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ কমে গিয়েছে শিশু, বকুল, আম, জাম, অর্জুন, বট, অশ্বত্থ, নিম, তেঁতুল, তাল, করমচার মতো গাছগুলি। এ কারণে গত বছর থেকেই বাগু নদীর তীরে মহুয়া, ছাতিম, হরিতকি, কেন্দু, বহেড়া, তালের মতো গাছগুলি বেশী পরিমাণে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১১৩টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এই প্রকল্পে নিযুক্ত করা হয়েছে। গত বছর প্রায় আড়াই হাজার তালের চারাও বসানো হয়েছে এই স্থানে। এবছরও প্রায় ১ হাজার তালের চারা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ মারফত রাজ্যের পরিবেশ দপ্তরের কাছে সুপারিশ জানানো হয়েছে, রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে কোন কোন গাছ লাগানো অতি অবশ্যই প্রয়োজন, তা যেন ভালো করে খতিয়ে দেখা হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই সব গাছগুলি হারিয়ে গেলে শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি হবে না, এই গাছগুলির উপর নির্ভরশীল প্রাণীদের প্রাণও বিপন্নতার সামনে এসে দাঁড়াবে।
পর্ষদ সূত্রের খবর, দাঁতন, গড়বেতা, গোবরডাঙ্গা, বাসন্তী এলাকাগুলিতে এই কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের ঝড়খালি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে অধিক মাত্রায় ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে সবুজবাহিনী। সবুজবাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাস্তার ধারে ও গ্রামীণ ফাঁকা এলাকায় এ বছর সুন্দরী, ধুন্দুল, গড়ান, বাইন, কাঁকড়া, কালো বাইন, পশুর, তরারের মতো গাছ লাগানো হচ্ছে।