অরণ্যবিনাশ রুখতে বহুদিন ধরেই তৎপর উদ্ভিদবিজ্ঞানীগণ। এই নিয়ে গবেষণাও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু সম্প্রতি অরণ্যবিনাশ রুখতে এক মহাস্ত্র হাতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীগণ। ব্রাজিলের ইঙ্গা বা গ্রিন গোল্ড উদ্ভিদ অরণ্য বিনাশের ক্ষেত্রে আশা জাগিয়েছে। এই ইঙ্গা উদ্ভিদ নিয়ে এক কর্মসূচিতে দেখা গেছে, জমিতে এই উদ্ভিদ চাষ করে বেশ স্বচ্ছলভাবেই দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার কৃষকেরা। জানা গেছে, 'আইসক্রিম বিন' নামে পরিচিত এই গাছ মাটিতে নাইট্রোজেনের প্রবেশ ঘটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে। মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমান বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এরফলে আগে যেখানে কৃষকরা জমি ব্যবসায়ীদের কাছে জমি বেচে দিতে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন সেই উৎসাহের মাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। কৃষকেরা নিজের জমিতে নিজেরাই চাষ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
ব্রিটেনের এক্সেটার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর টোবি পেনিংটন জানিয়েছেন, অদ্ভুত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশের কারণে এই প্রজাতির উদ্ভিদকে 'সুপার ট্রি' বা 'মিরাকেল ট্রি' বলা হয়ে থাকে। জানা গেছে, অন্য সকল উদ্ভিদের তুলনায় বহুগুন আগে বাড়ে এই উদ্ভিদ। অবিশ্বাস্য হলেও খুব খারাপ প্রকৃতির মাটিতেও সাধারণভাবেই বেড়ে ওঠে এই প্রজাতির উদ্ভিদ। এমনকি বৃষ্টির তফাতের কারণে যেসব জায়গাতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি তেমন হয়না সেইসব জায়গাতেও এই গাছ নির্বিঘ্নেই বেড়ে উঠতে পারে। জানা গেছে, এই প্রজাতির উদ্ভিদগুলির মধ্যে কলাইগুঁটি জাতীয় গাছের শিকড় মাটির নিচ পর্যন্ত পৌঁছে মাটির নিচে অর্বুদ তৈরী করতে পারে। এই অর্বুদগুলিতে বসবাস করে প্রচুর নাইট্রোজেন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া। মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমান বাড়ার ফলে অযোগ্য চাষের জমিও ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে উর্বর।
জানা গেছে, শুধু মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিই নয়, এই গাছের ফলেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে। এই গাছের পাতা থেকে আবার তৈরী হয় গবাদি পশুর খাদ্য। আমাজনের অববাহিকা অঞ্চলের এই বিশেষ উদ্ভিদকে অবিশ্বাস্য উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয়েছে। এই উদ্ভিদ যে শুধু মাটিতে নাইট্রোজেনের স্থায়িত্ব বাড়ায় তা নয়। এর সাথে সাথে এই উদ্ভিদ থেকে ঝরা পাতাও মাটির সার হিসেবে কাজে লাগে। প্রফেসর টোবি জানান, তিনি প্রায় দুই দশক ধরে এই উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। ‘গ্রিন গোল্ড’ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ সলো ডিসুজার কথায়, বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল যেহেতু এই অরণ্য তাই এই উদ্ভিদের বেড়ে ওঠা ভবিষ্যতে তাদের বেঁচে থাকার সহায়ক হয়ে উঠবে। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ইঙ্গা অরণ্যই হয়ে উঠবে তাদের চারণভূমি। এছাড়াও এই উদ্ভিদ যেহেতু মাটির ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম তাই ‘গ্রিন গোল্ড’ ইঙ্গার বনাঞ্চল অরণ্যবিনাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এমনটাই আশা উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের।