সারাদিনের কাজের পর শরীর চায় একটু শান্তি এবং একটু নিশ্চিন্তে ঘুম। কিন্তু নানা কারণের ফলে অনেকসময়ই দেখা যায় হয় রাতে ঘুম আসতে দেরি হচ্ছে না হয় পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম হচ্ছে না। এর ফলে পরের দিনের ক্লান্তি, কাজে মন না বসা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা প্রভৃতি ঘটতেই থাকে। তাই পরের দিন সতেজ থাকার জন্য রাতে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম অবশ্যই প্রয়োজন। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক ওষুধের ফলে রাতে ঘুম না আসাটা খানিকটা কমেছে। যেমন ধরুন, রাতে পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম হচ্ছে না সেক্ষত্রে মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট সাহায্য করতে পারে বা ধরুন আপনার বড় রাস্তার ধারে বাড়ি, সারারাত গাড়িঘোড়া চলাচল শব্দে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেক্ষেত্রে হোয়াইট নয়েস মেশিন আপনাকে শান্তির ঘুম প্রদান করতে পারে। এই বিশেষ মেশিনটি দিয়ে এমন একধরণের সাউন্ড সিগন্যাল নির্গত হয় যা ব্যাকগ্রাউন্ডের সমস্ত শব্দকে আড়াল করে দেয়। ফলে মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে।
এসব তো গেলো প্রযুক্তির কথা বা ওষুধের কথা যা মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় ঘুমে সাহায্য করে। কিন্তু এই সব প্রযুক্তি বা ওষুধ বাদ দিলে এমন আরও কয়েকটি প্রাকৃতিক জিনিস আছে যা অনিদ্রার ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই পৃথিবীর বুকে এমন অনেক গাছ আছে যেগুলি শোওয়ার ঘরে রাখলে ঘুম ভালো হয়। আজ আমরা সেইসব গাছ নিয়েই আলোচনা করবো।
১) জুঁই ফুল- বাইরের এক ইউনিভার্সিটি এক গবেষণায় প্রমান করেছে এমন এক তথ্য যেখানে দেখা যাচ্ছে, ঘরে জুঁই ফুল রাখলে সেই জুঁই ফুলের সুবাসে ঘুম যেরকম ভালো হয় সেরকমই ঘুমের মধ্যে অধিক নড়াচড়া করাটাও কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে যদি কেউ জেগে ওঠে অনেকসময় দেখা যায় এক অদ্ভুত উদ্বেগ কাজ করছে তার মনে। কিন্তু জুঁই ফুলের সুবাসযুক্ত ঘরে ঘুমিয়ে হঠাৎ জেগে উঠলে সেইপ্রকার উদ্বেগ খুব কম পরিমানে হয়ে থাকে।
২) ল্যাভেন্ডার- ল্যাভেন্ডার অনিদ্রার জন্য উপকারী তা অনেকেরই জানা। তাই অনেকেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরে ল্যাভেন্ডার রুম ফ্রেশনার বা ধুপকাঠি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও গরম জলে ল্যাভেন্ডার সেন্টের এসেন্সিয়াল তেল ফেলে সেই জলের গন্ধ নিলেও ঘুম তাড়াতাড়ি আসে। ল্যাভেন্ডারের সেন্ট একধরণের অ্যারোমাথেরাপির কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডারের গন্ধ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই ঘুমের আবেশ সৃষ্টি করে।
৩) স্নেক প্লান্ট- শুনে অদ্ভুত লাগলেও এই সাপ গাছ বা স্নেক প্লান্ট শোয়ার ঘরে রাখলে গভীর ঘুম আসতে বাধ্য। এই গাছকে ইনডোর প্লান্ট হিসেবে রাখতে অনেকেই পছন্দ করেন কারণ এই গাছের পিছনে বেশি সময় কাটাতে হয় না। খুব অল্প যত্নেই বেড়ে ওঠে এই গাছ। আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র 'নাসা'র ক্লিন এয়ার স্টাডিতে পাওয়া গেছে, এই গাছটি এমন একধরণের মুল্যবান গাছ যা ঘরের ভিতরে থাকা নানা দূষিত পদার্থ শুষে নিয়ে বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। কিন্তু বাড়িতে যদি পোষ্য থাকে তাহলে এই গাছটি বাড়িতে রাখা চলবে না। এই গাছটি আপনার প্রিয় বন্ধুর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রমান হতে পারে।
৪) গার্ডেনিয়া- গার্ডেনিয়া ফুলের গাছ খুব তাড়াতাড়ি একজন মানুষের মনকে শান্ত করে ঘুম আসতে সাহায্য করে। অনেকেই এটা স্বীকার করেছেন, শোওয়ার ঘরের জানলার বাইরে গার্ডেনিয়া গাছ লাগানোর পর থেকে তাদের অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম এসেছে। গার্ডেনিয়া গাছের ফল থেকে উদ্বেগ, ডিপ্রেশন, ডায়াবেটিস, জ্বর প্রভৃতির নানা ওষুধও তৈরী হয়। গার্ডেনিয়া গাছের ফুলের অত্যধিক সুন্দর সুবাসের কাছে হার মানেননি এমন মানুষ খুব কম আছেন। সেই সুন্দর সুবাসই একজন মানুষকে ঘুমের দেশে পাঠাতে সাহায্য করে থাকে।
৫) অ্যালোভেরা- অ্যালোভেরা গাছের নানা ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবেও এই গাছের যথেচ্ছ ব্যবহার রয়েছে। এই গাছটিও স্নেক প্লান্টের মতো রাতের অন্ধকারে বেশি মাত্রায় অক্সিজেন নির্গমন করে থাকে। ফলে ঘরের ভিতরের দূষিত বাতাস পরিশোধিত হয় যায় এবং নির্মল বাতাসে ঘুম ভালো হয়।
তাহলে আজ আমরা এমন কিছু গাছ সম্পর্কে জানলাম, যেগুলি ঘরে বা ঘরের ধারের জানলার কাছে রাখলে ঘুম খুব তাড়াতাড়ি আমাদের এসে ধরা দেবে। আমরা এখানে এমন সব গাছের কথা আলোচনা করলাম যা খুব সহজেই ফুলের নার্সারিতে আপনি পেয়ে যাবেন। তাই অনিদ্রা দূর করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা ওষুধের ব্যবহারের আগে একবার এই গাছগুলি লাগিয়ে দেখতেই পারেন।