গর্বের ‘মিসাইল উওম্যান’

‘লিঙ্গ বিচার্য বিষয় নয়, আমরা বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করি, মহিলা হিসেবে নয়’।

এ কথাগুলি যাঁর তাঁকে ‘মিসাইল  উইম্যান’ খেতাব দিয়েছিলেন  প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

দীর্ঘ দু’দশকের কেরিয়ার।  এদেশের ব্যালিস্টিক মিসাইলের প্রথম সারির বিশেষজ্ঞ।।  ভারতের মাটিতে তাঁর জনপ্রিয়তা ‘অগ্নিপুত্রী’ নামে। তিনি  টেসি থমাস।

আইপিএস অফিসার হতে পারতেন। পরীক্ষার খাতায়, ‘কী হতে চাও’ এমন প্রশ্নের উত্তরে লিখেছিলেন জীবনের লক্ষ্য আইপিএস হওয়া।  কিন্তু বদলে দিল  ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অরগ্যানাইজেশন এর  একটা ইন্টারভিউ। পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার দু ‘দিনের মধ্যেই তাঁকে  যোগ দিতে বলা হয়।  

শক্তি গবেষণার ক্ষেত্রটি মূলত পুরুষ প্রধান। টেসিই বদলে দিলেন সেই ছবি।  সালটা ১৯৮৮। টেসি যোগ দিলেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অরগ্যানাইজেশনে।  ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র  গবেষণাক্ষেত্রে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাঁর।

  অগ্নি -৪ এবং ৫- এর সফলভাবে উৎক্ষেপণের নেপথ্যে ছিলেন টেসি। তিনি  প্রোজেক্ট ডিরেক্টর।   প্রথম কোন  মহিলা বিজ্ঞানি যিনি মিসাইল প্রোজেক্ট টিমকে নেতৃত্ব দেন।  তাঁর অধীনে প্রায় ৪০০ জন বিজ্ঞানি কাজ করেন যারা বেশির ভাগ পুরুষ।  দীর্ঘ ২০ বছরের কর্ম জীবন।  গাইডেন্স কন্ট্রোল, ইন্টারনাল নেভিগেশন, ট্র্যাজেক্টি সিমুলশন ও মিশন ডিজাইন নিয়ে।  অগ্নি-৩ এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ছিলেন।   

বর্তমানে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অরগ্যানাইজেশন- এর অ্যারোনিউটিক্যাল সিস্টেম এর ডিরেক্টর।

FotoJet (124)

অগ্নির সফল উৎক্ষেপণই নয়। বিশিষ্ট এই বিজ্ঞানী নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন।  ‘আরভিএস’ নামের এই প্রযুক্তি আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও টেসির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ‘রি-এন্ট্রি ভেহিকেল সিস্টেম’ নামের ওই প্রযুক্তিতে উৎক্ষেপণ হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসতে পারে।

১৯৬৩  তে কেরালায় আলাপুঝায় জন্ম টেসি থমাসের। মাদার টেরিসার নামে তাঁর নাম রাখা হয় টেসি। বাবা ছিলেন আইএফএস অফিসার। টুম্বা রকেট লঞ্চিং  স্টেশনের কাছেই বাড়ি ছিল তাঁদের।  সেই দেখে দেখেই বেড়ে ওঠা। স্কুল জীবনে প্রবেশ করে সেই টান আরও বাড়ে।  যদিও সে সময় তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল পদার্থ বিদ্যা। 

ত্রিচূড় গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন টেসি।

পরবর্তী সময়ে পুনের ইনস্টিটিউট অফ আর্মামেন্ট টেকনোলজি (বর্তমানে ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি) থেকে তিনি গাইডেড মিসাইলে এম টেক করেন। 

কাজ করেছেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’ এ পি জে আবদুল কালামের সঙ্গে। তিনিই টেসিকে অগ্নি মিশাইল প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করেন। এ পি জে আবদুল কালামকে তিনি ‘গুরু’ মানতেন।

একদিকে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞানী অন্য দিকে তুখোড় ‘হোম মেকার’।  কিন্তু গবেষণার কাজে বাড়ি কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।  অসুস্থ ছেলেকে বাড়িতে রেখে যেতে পেরেছিলেন ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপন কেন্দ্রে।

ইন্ডিয়ান উইম্যান সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর ভাষায়  টেসি টমাস ভারতীয় মহিলা বিজ্ঞানীদের কাছে ‘ইন্সপিরেশন’। কিভাবে স্বপ্ন সফল করতে হয় তা তিনিই শিখিয়েছেন।

পাঁচ বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ডক্টর অফ সায়েন্সের শিরোপা।  এছারা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়রস ইন্ডিয়া, টাটা অ্যাডমিনিস্ট্রেইভ সার্ভিস এর ফেলো।

ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে ভারতকে আত্ম-নির্ভরশীল করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য তাঁকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।

FotoJet (123)

সম্প্রতি টেসির একটি স্পিচ ভাইরাল হয়।  মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা সেই ভিডিয়ো শেয়ার করে লেখেন, বলিউডের যে কোনও তারকার চেয়ে অনেক বড় তারকা টেসি।  ভারতের প্রতিটা স্কুলে তাঁর পোস্টার থাকা উচিত। স্টিরিও টাইপ ভাবনাকে চুরমার করে কী করে কেরিয়ার গড়তে হয় তাঁকে দেখে শিখুক ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...