ইইওওওউ...ওওওইইও...ওওইইআইআই...
নাহ, এ ভাষা হিব্রু ভাষা নয়। মেঘালয়ের কং থঙ গ্রামের মানুষরা এভাবেই একে অপরকে ডেকে থাকেন। এ তাঁদের ডাকনাম। নাম নয়, বলা ভাল ‘গান-নাম’।
নামে নামে নয়। মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলের জেলার ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম কং থঙ-এর মানুষ একে অপরকে গানে গানে চেনেন। চলতে, ফিরতে, রাগে, অভিমানে, ভালবাসায় তাঁরা সাড়া দেন সুরে সুরে।
পাহাড়ের কোলে, জঙ্গলঘেরা এই গ্রামটিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বাস। এখানে শিশু জন্মালে তার কোনও নাম দেওয়া হয় না। শিশুকে দেওয়া হয় ‘গান’। নিজস্ব সুর। গানে গানে ডাকা হয় তাকে। সেই নামেই তার পরিচিতি। এই গান শিশু পায় তার মায়ের কাছ থেকে। সদ্যজাত শিশুর জন্য গান বাঁধেন মা। মায়ের দেওয়া ‘নামগান’ ধরে অবশ্য বাবাও ডাকতে পারেন। কিন্তু সন্তানের জন্য সুর তৈরির অধিকার শুধুমাত্র মায়েদেরই আছে। শিশুরা বড় হওয়ার পরেও এভাবেই তাদের ডাকা হয়।
ডাকনাম হয়ে ওঠা গানগুলোর সুর ছোটও হতে পারে, আবার এক কলিও। আবার ৩০ সেকেন্ডের সুরেও ডাকা হয়।
ছোট সুরের নাম ধরে বাড়িতে ডাকা হয়। আর জঙ্গলে গেলে বড় সুরের নাম ধরে । স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস বড় সুরের নাম জঙ্গলে অপদেবতার হাত থেকে তাদের রক্ষা করবে।
ডাকনামের মত এই গানগুলিকে খাসিয়া ভাষায় বলা হয় ‘জিংরাই আইবেই’।
গ্রামের কেউ জানে না কবে থেকে কী করে এই প্রথার চল হল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই চলে আসছে।
কংথঙ গ্রামের মানুষরা যখন কাউকে ডাকেন মনে হয় পাখি ডাকছে। হঠাৎ শুনলে বিভ্রান্তি অমূলক নয়। এই গ্রামের বাসিন্দারা একে অপরকে এভাবেই ডাকতে অভ্যস্ত।
তাঁরা বলেন, একটি নতুন প্রাণকে পৃথিবীতে আনার পর সন্তানের প্রতি মায়ের বুকে যে অনুভূতি, যে আনন্দ, যে মমতা তা থেকেই জন্ম নেয় গান। সুর এমনিই এসে ধরা দেয় তাতে।
মেঘালয়ের এই প্রত্যন্ত গ্রামটি বাকি পৃথিবী র তুলনায় অনেকটাই আলাদা। এখানে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে ২০০০ সাল নাগাদ। রাস্তা পাকা হয়েছে ২০১৩-তে।
জঙ্গলের বাঁশ এবং ঘাসের ওপর নির্ভর করেই জীবিকাপালন। বেঁচে থাকা। পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা কংথং গ্রামের মানুষরা প্রকৃতির নিজস্ব শব্দ থেকেই এই ভাবে গান-সুরে বেঁচে থাকতে শিখেছে ।
প্রত্যেকের অবশ্য একটা করে ‘ভাল নাম’ আছে। কিন্তু সে ‘নাম’ ধরে ডাকার চল খুব কম। কেউ কারুর নাম ধরে ডাকছে বা, মা সন্তানের নাম ধরে ডাকছে মানে বুঝতে হবে ব্যবহারে আহত হয়েছে।
বিয়েতেও ‘গান-নাম’ই ব্যবহার হয়। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সন্তানের নামের সঙ্গে যুক্ত তার মায়ের নাম।