টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জেতার পর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজই প্রস্তুতি মহড়া ভারতের কাছে।
১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হতে চলেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২। ভারত মাঠে নামবে ২৩ অক্টোবর। প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। গ্ৰুপে ভারত পাকিস্তান ছাড়াও আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ। এছাড়াও আরো আটটা দলের মধ্যে থেকে থাকবে আরো দুই দল। তাদের মধ্যে সদ্য এশিয়া চ্যাম্পিয়ান শ্রীলঙ্কাও থাকতে পারে।
মাসের শুরুতেই শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে হেরেই এশিয়া চ্যাম্পিশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যায় ভারত। এখন মাসের ঠিক শেষে এসে পর দুটো সিরিজ। সদ্য অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সমস্ত খুঁটিনাটি দেখে নিতে চায় রোহিত, দ্রাবিড়রা।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচেই হারতে হল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শুরুতে আরশদীপ সিংহের এক ওভারে তিন উইকেট। শেষে সূর্যকুমার যাদবের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে টেম্বা বাভুমা দায়ী করলেন পিচকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বুঝতেই পারেননি তিরুঅনন্তপুরমের সবুজ পিচ এই রকম কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দেবে তাঁদের। বাভুমা বলেন, "আমাদের ব্যাটাররা নিজেদের কাজটাই করতে পারেনি। নিজেদের পরিকল্পনা ঘেঁটে গিয়েছিল। লোকেশ রাহুল যেটা ভারতের হয়ে করল, আমাদের মধ্যে কাউকে সেটা করতে হত। তবে পিচ যে এ রকম চমক দেবে ভাবিনি। আমরা দু'দিন ধরে এখানে অনুশীলন করছি। বুঝতে পারছিলাম উইকেটে বল সুইং করবে, কিন্তু এরকম হবে ভাবিনি।"
১০৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি প্রোটিয়াবাহিনী। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই তিন উইকেট নেন আরশদীপ। কুইন্টন ডি'কক, রিলি রুসো এবং ডেভিড মিলারকে সেই ওভারে আউট করেন তিনি। দীপক চাহার শুরুতেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাভুমাকে। ম্যাচের তৃতীয় ওভারের মধ্যেই পাঁচ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ধাক্কা কিছুটা সামলানোর চেষ্টা করেন এডেন মার্করাম এবং ওয়েন পারনেল।
লোকেশ রাহুল এবং সূর্যকুমার যাদবের অর্ধশতরানের দাপটে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। রান তাড়া করতে নেমে ২০ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় তারা। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি রান না পেলেও অসুবিধা হয়নি ভারতের।
অন্যদিকে গত রবিবার ২৫ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদে অস্ট্রেলিয়াকে শেষ ম্যাচে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ় ২-১ ফলে জিতে নিল ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যা কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে রাহুল দ্রাবিড়দের। রোহিত শর্মা যদিও মনে করছেন ভারতীয় দলের অনেক জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন।
রবিবার প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া তোলে ১৮৬ রান। যশপ্রীত বুমরা চার ওভারে ৫০ রান দেন। তিন ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার দেন ৩৯ রান। হর্ষল পটেল ডেথ ওভারে দু'ওভার বল করে দেন ১৮ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলি এবং সূর্যকুমার যাদবের দাপটে ছ'উইকেটে ম্যাচ জেতে ভারত।
সিরিজ জিতে ভারত অধিনায়ক জানিয়েছিলেন, "ব্যাটে, বলে এক এক দিন এক এক জন দারুণ খেলছে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। দলের অধিনায়ক হিসাবে এটা সাজঘরে বসে দেখা খুবই স্বস্তির।" যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অনেক জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন বলেও মনে করছেন রোহিত। তিনি বলেন, "অনেক জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন। বিশেষ করে ডেথ বোলিং। হর্ষল এবং বুমরা অনেক দিন পর মাঠে নেমেছে। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার খুব শক্তিশালী, ওদের বল করাও খুব কঠিন। যদিও সে দিকে তাকাতে রাজি নই। অনেক দিন পর মাঠে ফিরেছে ওরা, একটু সময় লাগবে। আশা করছি ওরা ছন্দে ফিরবে।"
আইপিএলে এক সময় ডেকান চার্জার্সের হয়ে খেলতেন রোহিত। ট্রফিও জিতেছিলেন। সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বলেও জানান রোহিত। তিনি বলেন, "হায়দরাবাদ আমার কাছে খুব স্পেশাল। ভারতীয় দলের হয়েও এই মাঠে যেমন স্মৃতি রয়েছে, তেমনই রয়েছে ডেকান চার্জার্সের হয়েও। আমরা চেয়েছিলাম দারুণ একটা জয় উপহার দিতে, সেটা পেরেছি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভুল করার জায়গা খুব কম থাকে। আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছি। সাহসী ক্রিকেট খেলেছি।"
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অর্ধশতরান করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে রানে ফিরলেন বিরাট কোহলি। রানে ফিরতে এবং নিজের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে তিনি কতটা মরিয়া ছিলেন, তা কোহলির নীরব উচ্ছ্বাস দেখেই বোঝা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের প্রথম দু'টি ম্যাচে তিনি রান করতে পারেননি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপে শতরানের পর বিরাট কোহলির সাময়িক খারাপ ছন্দ দেখে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন সমর্থকরা। তৃতীয় ম্যাচেই সব আশঙ্কা দূর করে দিলেন কোহলি। অর্ধশতরান করে দলকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন। এমনকি, রবিবার অর্ধশতরানের পর ব্যাট তুলে উচ্ছ্বাসও করতে দেখা যায়নি তাঁকে। শুধু এক বার ব্যাটটা আকাশের দিকে তুললেন। ব্যস, ওইটুকুই। রানে ফিরতে এবং নিজের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে তিনি কতটা মরিয়া ছিলেন, সেটা এর থেকেই বোঝা গিয়েছে।
কোহলির কথাতেও তারই প্রকাশ। আগের ম্যাচে অ্যাডাম জাম্পার বলে আউট হয়েছিলেন। অজি স্পিনারের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে এ দিন খেলা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই মাঠে চলে আসেন। গোটা দল আসার আগেই। তার মধ্যে নেটে অনুশীলন করে কাটিয়েছেন আধ ঘণ্টা। তারই ফসল যে অর্ধশতরান, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোহলি বলেছেন, "বিশ্রাম নিয়ে ফিরে আসার পর ব্যাটিংয়ের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। এশিয়া কাপেও ভাল খেলেছি। আজ দেড় ঘণ্টা আগে মাঠে চলে এসেছি। ৩০ মিনিট ধরে নেটে অনুশীলন করেছি। যে ভাবে খেলার পরিকল্পনা করছি, সেটা নিয়ে খুশি। ফিটনেস নিয়েও পরিশ্রম করছি। অনুশীলন বা জিমে যাওয়ার ব্যাপারে আগের মতোই আগ্রহ রয়েছে। আগের ম্যাচে ভাল খেলতে না পারার ব্যাপারটা মাথায় ছিল। আজ দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে খুশি। বড় রান না পেলে আর হা-হুতাশ করি না। পরের ম্যাচ নিয়েই ভাবতে শুরু করি। এ ভাবেই খেলে যেতে চাই।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে রাহুল শুরুতেই আউট হয়ে যাওয়ার পর কোহলির ঘাড়ে অনেকটাই দায়িত্ব এসে পড়েছিল। সেই দায়িত্ব ভাল ভাবেই পালন করেছেন তিনি। কোহলির কথায়, "তাই জন্যেই তো আমি তিনে ব্যাটিং করি। ওই জায়গায় নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। শুরুটা ভাল হওয়ার পরেই জাম্পাকে আক্রমণ করা শুরু করি। আজ জাম্পাকে মারব ঠিকই করে রেখেছিলাম। ও ভাল বোলার। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, ও সব সময় চেষ্টা করে আমার রানের গতি কমিয়ে রাখতে স্টাম্প লক্ষ্য করে বল করার। তাই জন্যে আগে থেকে লেগ স্টাম্পে স্টান্স নিয়েছিলাম। আগের ম্যাচের পর একটু হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তাই আজ মাঝের ওভারগুলোতে মারতে চেয়েছি, যাতে শেষের দিকে দল চাপে না পড়ে। ম্যাচটা এত দূর গড়ানো উচিত হয়নি। শেষ ওভারে ১১-র বদলে আমাদের চার-পাঁচ হয়তো তাড়া করা উচিত ছিল। চেয়েছিলাম অন্তত প্রতি ওভারে একটা চার মারতে।"
ভারত ম্যাচ জিতুক বা হারুক, রোহিতের কাছে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৯তম ওভার। কখনও ভুবনেশ্বর কুমার, কখনও হর্ষল পটেল, কখনও আরশদীপ সিংহ, ১৯তম ওভারে যিনিই বল করতে আসেন, তিনিই রান দিয়ে যান। রোহিত শর্মার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৯তম ওভার। নির্বিষ ১৯তম ওভারটাই বিষ হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় দলের কাছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের সেরা আরশদীপ চার ওভারে ৩২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। এর মধ্যে ১৯তম ওভারেই ১৭ রান দিয়েছিলেন আরশদীপ। ওই ওভারে রান তুলেই ১০০ রানের গণ্ডি টপকেছিলেন প্রোটিয়ারা। এই রোগ যদিও নতুন নয়। এশিয়া কাপ থেকেই চলছে ১৯তম ওভারে রান দেওয়া।
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভারে বল করেছিলেন ভুবনেশ্বর। তিনি ১২ রান দেন। ওই ওভারে দু'টি উইকেট নিলেও শাহনাওয়াজ দাহানি তাঁকে ছক্কা হাঁকান। সেই ম্যাচ জিততে যদিও কোনও অসুবিধা হয়নি। পাঁচ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল ভারত। এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ৪০ রানে জিতেছিল ভারত। কিন্তু সেই ম্যাচে ১৯তম ওভার বল করতে এসে আবেশ খান দিয়েছিলেন ২১ রান। চার ওভারে ৫৩ রান দিয়ে শেষ করেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচের পর আর সুযোগ পাননি আবেশ।
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯তম ওভার। সেই ওভারে বল করেছিলেন ভুবনেশ্বর। ১৯ রান দিয়েছিলেন তিনি। শেষ দু'ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। আসিফ আলি এবং খুশদিল শাহ একের পর এক বল মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সেই ওভারে একটি ওয়াইডও করেন ভুবনেশ্বর। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ বোলারের থেকে এটা আশা করেননি কেউই। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারের পিছনেও ছিল ১৯তম ওভার। সেই ম্যাচেও বল করেছিলেন ভুবনেশ্বর। শেষ দু'ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ২১ রান। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর দেন ১৪ রান। দাসুন শনাকা দু'টি চার মারেন। দু'টি ওয়াইড দেন ভুবনেশ্বর। ভারতের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় ওখানেই। শেষ ওভারে আরশদীপের পক্ষে ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভার করেছিলেন অক্ষর পটেল। সেই ম্যাচে মাত্র পাঁচ রান দিয়েছিলেন তিনি। ব্যতিক্রম হয়েই রয়ে গিয়েছে সেই ম্যাচ।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ভারতের ম্যাচ জয়ের সব আশা শেষ হয়ে যায় ১৯তম ওভারে। শেষ দু'ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। বল তুলে দেওয়া হয় দলের অন্যতম অভিজ্ঞ পেসার ভুবনেশ্বরের হাতে। তাতেই আঁতকে উঠেছিলেন সমর্থকরা। এশিয়া কাপের স্মৃতি যে তখনও বেশ টাটকা। আশঙ্কাই সত্যি হয়। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর দেন ১৬ রান। ওভারের প্রথম বলটাই ওয়াইড করেন তিনি। সেই ওভারের শেষ তিনটি বল বাউন্ডারিতে পাঠান ম্যাথু ওয়েড। শেষ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ়ের দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির কারণে মাত্র আট ওভারের ম্যাচ হয়। সেই ম্যাচ এই তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলতে নেমে প্রথম বার ৫০ রান দিলেন যশপ্রীত বুমরা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ়ের তৃতীয় ম্যাচে চার ওভার বল করে কোনও উইকেট পাননি ভারতীয় পেসার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যা চিন্তায় ফেলবে রোহিত শর্মাকে।
এশিয়া কাপে চোটের কারণে খেলতে পারেননি বুমরা। অস্ট্রেলিয়া বিরুদ্ধে চোট সারিয়ে ফিরে আসেন তিনি। প্রথম ম্যাচে তাঁকে খেলানো হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র দু'ওভার বল করেন। রবিবার চার ওভার বল করলেও ছন্দ পেলেন না বুমরা।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় তৃতীয় ম্যাচে ১৯তম ওভার করতে আসেন যশপ্রীত বুমরা। ভারতের অন্যতম সেরা পেসার মনে করা হয় তাঁকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর কাঁধেই ১৯তম ওভার করার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তিনিও ব্যর্থ। ১৮ রান দিয়েছিলেন ১৯তম ওভারে। ড্যানিয়াল স্যামস সেই ওভারে একটি চার এবং একটি ছক্কা মারেন। টিম ডেভিড ব্যাট করার সময় ওভার থ্রোয়ে ছ'রান হয়ে যায়। চার ওভারে ৫০ রান দিয়ে শেষ করেন বুমরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম বার চার ওভারে ৫০ রান দেন তিনি।
ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ় প্রথম ম্যাচেও একই ধারা বহমান। নিজের প্রথম ওভারে তিন উইকেট নেওয়া আরশদীপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ১৯তম ওভারে বল করার। ১৭ রান দিয়েছিলেন তিনি। সেই ওভারের আগে পর্যন্ত তিন ওভারে ১৫ রান দেওয়া আরশদীপ কেঁপে যান ১৯তম ওভারে এসে। কেশব মহারাজ তাঁকে সেই ওভারে দু'টি চার এবং একটি ছক্কা মারেন। যদিও তাতে আরশদীপের ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ভারত ম্যাচও জিতে নেয় আট উইকেটে।
জিতলেও ১৯তম ওভারের বিষ গিলতেই হল ভারতকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই একটি ওভারের ভুলে ম্যাচ হারাতে হতে পারে রোহিতদের। সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরার আগে এই বিষের ওষুধ বার করতেই হবে রাহুল দ্রাবিড়দের।
অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আবার কপালে ভাঁজ পড়েছে রোহিত শর্মার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন যশপ্রীত বুমরা। শুধু বিশ্বকাপই নয়, বেশ কয়েক মাস তাঁকে পাবে না ভারতীয় দল। বোর্ডের সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, পিঠের চোট এতটাই গুরুতর যে প্রায় ছ'মাস ছিটকে যেতে পারেন ভারতের এই জোরে বোলার। বিশ্বকাপ ছাড়াও বছরের শেষে এবং সামনের বছরের শুরুতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ রয়েছে ভারতের। সেখানে বুমরাকে না পাওয়া ভারতীয় দলের কাছে বিরাট ধাক্কা হতে চলেছে।
রবীন্দ্র জাডেজার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন বুমরা। কয়েক দিনের ব্যবধানে দলের সেরা দুই ক্রিকেটারকে হারানো নিঃসন্দেহে ভারতের কাছে বেশ সমস্যার হতে চলেছে। বুমরার বদলে ভারতের হাতে মহম্মদ শামি বা মহম্মদ সিরাজের মতো বোলার রয়েছে। জাডেজার পরিবর্তে অক্ষর পটেল দলে এসেছেন। কিন্তু বিপক্ষের বুকে ত্রাস ধরাতে বুমরা বা জাডেজার ভূমিকা অনবদ্য।
বুমরা যদি সত্যিই ছ'মাসের জন্যে ছিটকে যান, তা হলে তাঁকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। আপাতত যা সূচি, তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারতের শেষ ম্যাচ যোগ্যতা অর্জনকারী দলের বিরুদ্ধে, যেটি হবে ৬ নভেম্বর। ফাইনালে উঠলে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত খেলতে হবে। তার পরেই নিউজ়িল্যান্ডে যাবে ভারত। সেখানে তিনটি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে ভারত। ডিসেম্বরে ভারত যাবে বাংলাদেশে। সেখানে দু'টি টেস্ট এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে তারা।
জানুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে ভারত। সেখানে তিনটি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে তারা। জানুয়ারির শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড খেলতে আসবে ভারতে। তারাও তিনটি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে। তবে আসল সিরিজ় হতে চলেছে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে। অস্ট্রেলিয়া ভারতে আসবে চারটি টেস্ট এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলতে। টেস্ট সিরিজে বুমরার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইমুহূর্তে বুমরাকে ছাড়াই হয়তো ভারতকে এই সিরিজ়গুলিতে নামতে হতে পারে। বাকিদের কাছে এটা যে বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে চোট পেয়েছেন আর এক অলরাউন্ডার দীপক হুডা। ম্যাচ শুরুর আগে বোর্ডের তরফে এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ়ে দলে ছিলেন হুডা। প্রথম দু'টি ম্যাচে প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। তৃতীয় ম্যাচ শুরুর আগে হঠাৎই বোর্ডের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তিনি চোটের কারণে তৃতীয় ম্যাচে খেলতে পারবেন না। হুডাকে যে তৃতীয় ম্যাচে নেওয়া হতে পারে, এমন কোনও সম্ভাবনাও ছিল না। আচমকা তাঁর চোটের খবরে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তা আরও বেড়েছে চোটের ধরন না জানানোয়। কোথায়, কী ভাবে চোট পেলেন হুডা, তা নিয়ে বোর্ডের বিবৃতিতে একটি শব্দও বলা হয়নি।
সবমিলিয়ে খুব স্বস্তিতে নেই রোহিত শর্মারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজই এখন ভরতের সমস্ত খুঁটিনাটি সারিয়ে টিমকে প্রস্তুত করার মহড়ার কাজ করবে বলেই আসা করাই যায়।
নিবন্ধকারঃ ঋদ্ধি রিত