ক্রিকেট থেকে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন, পৌঁছেছিলেন সাফল্যের শিখরে

আত্মহত্যার পথে থেকে ভারতের সেরা বাঁ-হাতি কীভাবে হয়ে উঠতে হয় তা দেখিয়েছিলেন সুরেশ রায়না। তাঁর শৈশবে এমনকিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল, যা তাকে এক সময়ে আত্মহত্যা করার জন্য ভাবতে বাধ্য করেছিল। ছোট্ট রায়নার সুন্দর জীবন ক্রমাগত বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। ঠিক তখনই ক্রিকেটকে হাতিয়ার করে ফিরে আসার পথ খুঁজে নিয়েছিল।


হোস্টেলে তার সিনিয়র এবং সঙ্গীরা তাকে বিভিন্ন সময়ে নানা উপায়ে অতিষ্ট করে তুলছিল। কনকনে শীতের রাতে রায়না যখন গভীর ঘুমে, তখন তারা তার উপর বরফ শীতল ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিত, তার দুধের গ্লাসে ময়লা আবর্জনা ফেলে দিত এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন রায়নার হাত মাটিতে রেখে তার হাতের উপর মুত্রত্যাগও করতো। কিন্তু গরীব পরিবারের ছেলে রায়না কোন প্রতিবাদ করতে পারতো না। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত। এসব থেকে বাঁচতে একসময় আত্মহত্যা করবে বলে ঠিক করে নিয়েছিল। পথ দেখিয়েছিল ক্রিকেট। নতুন জীবনের স্বাদ দিয়েছিল এই খেলা।

sureshraina1

 

হোস্টেলের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পরে মুম্বই থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষে খেলার জন্য একটি ফোন আসে, যেখানে তার সাথে প্রথমবারের মতো প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার প্রবীন আমরের সাক্ষাৎ হয়। বদলে যায় জীবন। তারপর ২০০৫ সালে তার জাতীয় দলে অভিষেক হয় এবং আইপিএল শুরু হওয়ার পর রায়না তারকা খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে অসামান্য নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন এবং ২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন।২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছানতে তাঁর বিরাট বড় ভূমিকা ছিল। বল হাতে জুটি ভাঙতে ওস্তাদ ছিলেন রায়না। আসলে বিষাদময় জীবনের যন্ত্রনা জয় করে সুরেশ রায়না এক সফল ক্রিকেটারের নাম; তার অধ্যবসায় তাঁকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে সহায়তা করেছে।

ধোনির সময়ে রায়নার ব্যাট থেকে অসাধারণ কিছু পারফর্মেন্স পেয়েছিল ভারত। চাপের মুখে দারুণ সব ইনিংস খেলে দলকে সামাল দিয়েছেন রায়না। সেই সময় ধোনির কাছে ভীষণ রকমের সাপোর্ট পেতেন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। এছাড়া আইপিএলেও একই দলের হয়ে খেলতেন এই দুইজন। রায়নার বোলিংয়ের ওপরও ভরসা করতেন ধোনি। ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনাল ও সেমি ফাইনাল ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রান করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। সব মিলিয়ে ধোনির নেতৃত্বে ব্যাটিং এ অনেক উন্নতি করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান।

 

sureshraina2

১৯৮৬ সালের আজকের এই দিনে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদনগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে টেস্ট, ওডিআই এবং টি২০ আন্তর্জাতিকে খেলেছেন। বামহাতি মাঝারি সারির ব্যাটসম্যান হিসেবে আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলে থাকতেন সুরেশ। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে অফ-স্পিন বোলিং করতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে উত্তর প্রদেশ দলে খেলেন এই ক্রিকেটার। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে চেন্নাই সুপার কিংসের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। আইপিএলে সর্বাধিক খেলার অধিকারী রায়না চেন্নাই সুপার কিংসের সবগুলো খেলাতেই অংশ নিয়েছেন।

সুরেশ রায়না’র বাবা ত্রিলোকি চাঁদ একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। শ্রীনগরের রায়নাওয়ারি এলাকা থেকে সুরেশের পরিবার উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ এলাকায় স্থানান্তরিত হন। ২০০৫ সালে ঘরোয়া ওয়ান ডে ট্রফিতে মহম্মদ কাইফ এর নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশ দলের হয়ে অভিষেক ঘটে। ২৫৪ রান ও ৯ টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে অলরাউন্ড অবদান রাখেন। উত্তর প্রদেশ সে বার যুগ্মভাবে বিজয়ী হয়। ১৮ বছর বয়সে ২০০৫ সালে ইন্ডিয়ান অয়েল কাপ-এ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকের মাধ্যমে রায়না’র অভিষেক ঘটে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে একই দলের বিপক্ষে। ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ বিজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি ।

sureshraina3

 

পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চির এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের জার্সি পরেছিলেন ২০০৫-এ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। টেস্ট অভিষক ২৬ জুলাই। সেই বছরই একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ৩০ জুলাই। এক বছর পর টি২০ খেলার সুযোগ আসে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২০০৬-এর ১ ডিসেম্বর। ১৯টি টেস্ট ম্যাচে রায়নার রান ৭৬৮, গড় ২৬.১৮। একটিমাত্র সেঞ্চুরি করেছিলেন। হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা সাত। সর্বোচ্চ রান ১২০। বল হাতেও টেস্টে সাফল্য এসেছে। নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট।

রায়না আসলে ছিলেন লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটার। তিনি তাঁর কেরিয়ারে ২২৬টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ৫৬১৬ রান, গড় ৩৫.৩১। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ৩৬টি হাফ সেঞ্চুরি। সবোর্চ্চ রান অপরাজিত ১১৬। ৩৬টি উইকেটও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। টি২০তে ৭৮টি ম্যাচ খেলে রায়নার রান ১৬০৫, গড় ২৯.১৮। রয়েছে একটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রান ১০১। ১৩টি উইকেট নিয়েছে টি২০তে। একটা সময় ভারতীয় লিমিটেড ওভারের বিশ্বস্ত সারথী ছিলেন সুরেশ রায়না। তিনি শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৫-র ১০ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তার পর ওডিআই দলে নিয়মিত ছিলেন। ২০১৮-র ১৭ জুলাইউ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলেন তিনি। টি২০তে তাঁর শেষ ম্যাচ ইংল্যান্ডেরই বিরুদ্ধে। তবে এখনও আইপিএল খেলছেন চেন্নাইয়ের প্রিয় চিন্নাপ্পা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...