হাওড়ার ঘুসুড়ি এলাকা।
গলি, তস্য গলি। মানুষ হাঁটলেও সাবধানে যেতে হয়, গাড়ি হলে তো কথাই নেই।
ঘিঞ্জি জনবসতি পার হয়ে কিছুটা এগোলেই ৫ নম্বর গোঁসাই বাগান স্ট্রিট।
চোখের সৌন্দর্য যদি বলেন তাহলে এই ঠিকানায় হয়ত তা কিঞ্চিৎ অধরা। কিন্তু সেটুকু এড়িয়ে সামনে এগোলেই অপেক্ষা করে আছে ওপার বিস্ময়।
দেশের প্রথম তিব্বতী বৌদ্ধ মন্দির। ভোট বাগান তিব্বতী মঠ।
এরকম অদ্ভুত নামের একটি ইতিহাস আছে।
"ভোট" শব্দটির আগমন ঘটেছে "ভোদ" নামক শব্দ থেকে। আর 'ভোদ' সাধারণত বলা হয় তিব্বতে বসবাসকারী ভুটিয়াদের, আর বাগান অর্থাৎ উদ্যান। পুরো মানে "তিব্বতী উদ্যান"।
এই অঞ্চলের নামের উৎপত্তিও তিব্বতী সংসর্গ থেকেই।
"গোঁসাই" হল পুরাণ গিরি গোঁসাই, যিনি ছিলেন এই মঠের প্রথম মোহান্ত যার দ্বারা এই মঠের সূচনা।
তিব্বতীরা তাঁদের পর্বত প্রদেশ থেকে হাওড়ার ঘুসুড়িতে কীভাবে এলেন, এই প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক।
কোচবিহার এবং তিব্বতের সংযোগ ছিল।
কোচবিহারের রাজপরিবারে রাজ নিয়োগেও প্রত্যক্ষ তিব্বতী প্রভাব চ
বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যার অন্যতম নায়ক বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিং, পাঞ্চেন লামা ও পুরাণ গিরি গোঁসাই। যাদের হাত ধরেই ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে গঙ্গার এই পাড়ে ঘুশুড়ী অঞ্চলে তৈরি হয় ভোটবাগান মঠ।
পরবর্তী সময়ে সেই সংযোগে যুক্ত হয় আর একটি নাম। ওয়ারেন হেস্টিংস। বদলে যায় ইতিহাস।
ঘুসুড়ির গঙ্গার তীরে ভোটবাগান মঠ।
এই মঠের মোহান্ত কিন্তু দশনামী শৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। মঠের সব কিছুতেই বেশ গা ছমছমে একটা অনুভূতি।
প্রথম মোহান্ত পূরনগিরি । মৃত্যুর পরে মঠ চত্বরেই তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়, সমাধির উপরে শিব মন্দির করা হয়েছে ।
তিব্বতীদের ইচ্ছাঅনুসারে ব্রিটিশ সহায়তায় ভোটবাগান মঠের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রধান উদ্দেশ্য তিব্বতী লামারা এখানে ধর্ম বিস্তারের কারণে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে এবং নিজেদের ধর্ম সাধনের অনুমতি পায়।
মঠের মধ্যে তিব্বত থেকে আনা বৌদ্ধ তান্ত্রিক দেব-দেবী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রধান দেবী আর্যতারা। তিব্বতী নাম গ্রলমা।
এখনও এই অঞ্চলে গেলে মন্দিরটি দেখা যায়। লোকচক্ষুর অন্তরালে জলজ্যান্ত ইতিহাস।