'মাই নেম ইজ গওহর জান'

উনিশ শতকের একেবারে শুরুতে ভারতের সঙ্গীত ক্ষেত্রে ঘটে গেল এক বড় বিপ্লব। ১৯০২ সালে বাংলায়  এফ.ডাব্লিউ গেইসবার্গ গ্রামোফোনের প্রচলন শুরু করলেন। দিনটা ২২ নভেম্বর। শুরুতে ক্ল্যাসিকাল থিয়েটারের এক নর্তকী দিয়ে গান গাইয়েছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রথম গান রেকর্ড করেন এক আর্মেনিয়ন গায়িকা।

ওই বছরেই ১১ নভেম্বর গেইসবার্গ গান রেকর্ড করালেন গওহর জানকে দিয়ে। গানের জগতে তিনি তখন তারকা।

 সাত ও দশ ইঞ্চি ব্যাসের রেকর্ডে তাঁর গানগুলি ধারণ করা হয়। গওহর জান হিন্দুস্থানি ভাষায় দাদরা তালে প্রথম গানটি রেকর্ড করেছিলেন। গওহর জানের ধারণ কৃত তাঁর প্রথম বাংলা গানটি ছিল “ভালো বাসিবে বলে ভালো বাসিনে”। পরের দিন আবারও গওহর জানের কণ্ঠে গান রেকর্ড করা হয়।

g-1 (2)

কলকাতার এক বিখ্যাত হোটেলের দুটো রুম জুড়ে তৈরি হয় স্টুডিয়ো রুম। ১৯০৩ সালে রেকর্ডিং- এর জন্য তিনি তিন হাজার টাকা নিয়েছিলেন

 এই রেকর্ডই তাঁকে অল্পদিনের মধ্যে বিখ্যাত করে তুলল। কলকাতার সকল সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছবি ছাপা হল গওহরের।  

গওহর জানের আসল নাম ছিল অ্যাঞ্জেলিনা।

g4

দাদু ছিলেন ব্রিটিশ | দিদিমা ভারতীয় | তাঁদের মেয়ে ভিক্টোরিয়া ছোট থেকেই নাচগানে তুখোড়| হিন্দুস্তানি গান‚ কত্থক‚ ভারতীয় ধ্রুপদী শিল্পকলার যে কোন ক্ষেত্রে চোখ টেনে নেওয়া নিপুন প্রদর্শন |

ভিক্টোরিয়া প্রেমে পড়লেন জনৈক উইলিয়াম ইওয়ার্ডের| আর্মেনিয়ান ইহুদি তিনি | ভারতে এসেছিলেন ভাগ্যের সন্ধানে | কাজ করতেন ড্রাই আইস ফ্যাক্টরিতে|

g-1 (1)

 বিয়ে হল উইলিয়াম-ভিক্টোরিয়ার | ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন জন্ম নিল ‘অ্যাঞ্জেলিনা’ | অ্যাঞ্জেলিনা ইওয়ার্ড।

তবে উইলিয়াম আর ভিক্টোরিয়ার সম্পর্ক এক পথে এগোচ্ছিল না। ভাঙন ধরল সম্পর্কে। তাঁরা আলাদা হয়ে গেলেন।  

তখন এঞ্জেলিনার বয়স পাঁচ কী। বেনারসে থেকে মা আর মেয়ে চলে এলেন কলকাতায়। শুরু হল নতুন লড়াই। অন্য এক পুরুষ এল ভিক্টোরিয়ার জীবনে। আবার বিয়ে করলেন তাঁরা। বিয়ের সময় ভিক্টোরিয়া মুসলিম ধর্মে দীক্ষা নিলেন। তখন তাঁর নতুন নাম হল, মালকা জান। আর মেয়ের নতুন নাম হল, গওহর জান।

এক সময় গওহর আর গ্রামোফোন একে অপরের সমার্থক হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে বলা হত ‘ভারতের গ্রামোফোন মেয়ে’।  

১৯০২-১৯২০ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ টি রেকর্ড বেরিয়েছিল গওহর জান-এর। বাংলা সমেত প্রায় ১০ টিরও বেশি ভাষায় গান গেয়েছিলেন। তার মধ্যে হিন্দি গুজরাটি মালায়লামের মতো আঞ্চলিক ভাষা যেমন ছিল তেমনি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ফার্সিও ছিল।

হিন্দুস্তানি ধ্রুপদী সঙ্গীতে ভজন, ঠুংরি, দাদরা গাইতেন

প্রতি রেকর্ডের শেষে তিনি বলতেন‚ ‘ মাই নেম ইজ গওহর জান‘ | 

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...