মেয়েটা স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গতানুগতিক পড়াশোনা যদিও মেয়েটাকে টানে না তবুও পড়াশোনায় মন্দ ছিলেন না। তবে বাবা ছোট থেকেই মেয়েকে শিখিয়েছিলেন স্বনির্ভর হতে। স্নাতকের প্রথম বর্ষে থাকাকালীন একটা সরকারি অফিসে কেরানির চাকরি নিয়েছিলেন মেয়েটা। এই চাকরির সময় মেয়েটার অফিসের এক সহকর্মীর বাড়িতে চুরি হয়। মহিলা সহকর্মী তাঁর নতুন পুত্রবধূর ওপর এই চুরির দোষ চাপিয়েছিলেন। মহিলাটি পুত্রবধূকে সন্দেহ করতেন। এদিকে সরকারি কেরানি মহিলা তাঁর সহকর্মীর বাড়ির চুরির রহস্য সমাধানের দায়িত্ব নেন। বেশ কয়েকদিন সহকর্মীর বাড়িতে যাতায়াত করেন মেয়েটা।
তুখোড় বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেয়েটা কয়েকদিনের মধ্যেই রহস্যের সমাধান করে ফেলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ওই মহিলা সহকর্মীর পুত্রবধূ নয় বরং ছেলেই ডাকাতি করেছে। বাইশ বছরের সেই মেয়েটা সেই অপরাধীকে দিয়ে স্বীকারোক্তিও আদায় করেছিলেন। প্রথমবার নিজের সঠিক কাজ এবং ভালোবাসার হদিশ পেয়েছিলেন বাইশ বছরের মেয়েটা। তিনি রজনী পন্ডিত। তাই রজনী পন্ডিত হার মানাতে পারেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা এবং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সীর মত যেকোনো উপন্যাসের গোয়েন্দা চরিত্রকে।
ছোট থেকেই অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন রজনী। গতানুগতিক পড়াশোনা তাঁকে কোনদিন টানত না। তাই স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সরকারি অফিসে চাকরি করলেও তাঁর ইচ্ছে ছিল গুপ্তচর হওয়ার। সেই জন্যেই পরবর্তীকালে গড়ে তুলেছিলেন নিজের গোয়েন্দা সংস্থা। রজনীর বাবা ছিলেন সিআইডি অফিসার। বাবা গোয়েন্দা হওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন মেয়েকে। বাবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রজনী ধীরে ধীরে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে নামেন। তাঁর মামলা সমাধানের উপায় ছিল অন্য ধরনের। রজনী পন্ডিতের সাফল্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে তিনি ভারতের প্রথম মহিলা গোয়েন্দা হিসেবে স্বীকৃতি পান। গোয়েন্দা সংস্থাও স্বীকৃত হয়।
নিজের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তিনি বহু মামলার নিষ্পত্তি করেছিলেন। ১৯৯১ সালে তাঁর নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছিলেন রজনী। তাঁর গোয়েন্দা সংস্থা আজও ছোট-বড় মিলিয়ে মোট আশি হাজারেরও বেশি মামলার নিষ্পত্তি করে চলেছেন। সরকার থেকে বহু পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে।
এমনকী দেশের হয়েও ভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি করেছেন তিনি। মহিলা গুপ্তচর হিসেবে তিনি আজও দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত। বিভিন্ন কঠিন কেস সমাধান করে তাঁর দক্ষতাও সর্বজনবিদিত।
সত্যের পথে থাকতে গিয়ে তিনি জেলেও রাত কাটিয়েছেন। একটি মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। অভিযোগ ছিল তিনি ভুল পদ্ধতিতে ফোনের তথ্য আদায়ের চেষ্টা করেছেন। যদিও এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে রজনী পন্ডিত গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার জন্যেই এই তথ্য পেয়েছিলেন। তাঁকে যথারীতি ছেড়ে দেওয়া হয়।
জীবনের স্বাধীনক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে আজও বিচরণ করে চলেছেন রজনী পন্ডিত। প্রকৃত স্বাধীনতার আলো গায়ে মেখে সকলের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই রজনী পন্ডিত।