দক্ষিণ ভারতের ত্রিচুরের এক হাসপাতাল। শুনশান ওয়ার্ড। সেখানে মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে এক ছাত্রী। সদ্য চীন থেকে ফিরেছে।
ছাত্রীটি তখনও পর্যন্ত জানে না তার কী হয়েছে। হঠাৎ বন্ধুর থেকে মোবাইলে একটা টেক্সট মেসেজ পেলেন। বন্ধু জানিয়েছে, টিভিতে দেখানো হচ্ছে চীনের উহান প্রদেশ থেকে আসা এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত।
ওয়ার্ডে মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকা ওই ছাত্রীর কোনও সন্দেহ ছিল না যে টিভিতে দেখানো ওই খবরের কেন্দ্রবিন্দু আসলে সেই-ই।
তবে ভয় পায়নি মেয়েটি। শান্ত ভাবে মেনে নিয়েছিল।
কেমন ছিল হাসপাতালের অভিজ্ঞতা?
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই ছাত্রী জানিয়েছেন, সেদিন প্রায় এক ঘন্টার মধ্যেই ডাক্তার চলে আসেন তাঁর কাছে। দীর্ঘ পরীক্ষার পর পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা শুরু হয়। শুরু থেকেই সবটা খুব পজেটিভ ছিল। ভয় তো একেবারেই পায়নি, বরং পৃথিবীর আর কোথায় কীভাবে করোনার চিকিৎসা চলছে সে বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ রাখছিলেন তিনি।
বিধি মেনেই ওই ছাত্রীর নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। চীনের উহানে মেডিসিন নিয়ে পড়ছিলেন।
করোনার প্রকোপে উহান শহরে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণার আগেই ভারতে ফিরে আসতে সক্ষম হন। চীন থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার বিশেষ বিমানে প্রথমে কলকাতায় আসে। তখন এক থার্মাল স্ক্রিনিং হয়। কলকাতা থেকে কোচিন ফেরার পর আবার নিয়ম মত থার্মাল চেকিং হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার পর ত্রিচুর মেডিকেল কলেজে উহান এক পরের দিন বেইজিং-এর ভারতীয় দূতাবাস থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়। যারা চীন থেকে এসেছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার আবেদন জানানো হয়।
প্রথমবার করোনা টেস্টেও কিছুই লক্ষণ ধরা পড়েনি। কিন্তু ২৭শে জানুয়ারি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর গলায় ব্যথা অনুভব করেন। জ্বরের লক্ষণও ছিল। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ফের টেস্ট । এবারের রিপোর্ট পজেটিভ আসে।
সরকারিভাবে ৩০শে জানুয়ারি জানানো হয় যে তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতের প্রথম করোনা আক্রান্ত।
তিনি জানিয়েছেন, পরিবার নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তিনি কিন্তু সেরে যে উঠবেন সে নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। পুরো পরিবার কোয়ারেন্টাইনে। দেশে ফিরে কার কার সংস্পর্শে এসেছিলেন সে নিয়েও খোঁজ খবর শুরু হয়। পারিবারিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কারণেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা জরুরি ছিল।
চিকিৎসকা নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি। জানিয়েছেন, কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা সকলেই ওয়ার্ডে আসতেন পিপিই, মাস্ক ও যথাযথ প্রতিরোধ বিধি মেনেই। কথা বলতেন স্বাভাবিকভাবেই। করোনার জন্য বাড়তি ভয় বা টেনশন ছিল না।
ছাত্রীটি ফিরতে চান আগের জীবনে। পরিকল্পনাও সারা। পরিস্থিতি একটু ঠিক হলেই ফিরে যাবেন উহানে। তাঁর ৬ বছরের মেডিসিন কোর্সের এখনও যে অর্ধেকটাই বাকি!