বছর ছাব্বিশের রঘুপতি শর্মা। আইটি সংস্থায় সফটওয়্যার ডেভলপার। মুম্বইয়ের জুহুতে একা থাকেন। লকডাউন চললেও সারাদিনে ব্যস্ততার ছবিটা একটুও বদলায়নি তার জীবনে। সকাল হলেই শুরু হয়ে যায় অফিস শিফট। ওয়ার্ক ফ্রম হোম ব্যবস্থা। অফিস কল, টিম মিটিং মিলিয়ে কাজের ধরনে এতটুকু বদল আসেনি। টানা কাজ চলে। শেষ হয় সন্ধে বেলা।
সারাদিন ধরে সে অপেক্ষা করে দিনের এই সময়টার জন্য। কারণ তার সন্ধে সাতটার পরের সময়টা ফ্রানির। সে এলেই রঘুপতির সারাদিনের চাপ আর ক্লান্তি আর টেনশনে মুহুর্তে উবে যায়। এই সময়টা তার ‘স্ট্রেস বাস্টার’।
কিন্তু ফ্রানি কে?
প্রত্যেকদিন সন্ধে সাতটার সময় স্কাইপে দেখা দেয় ফ্রানি। ছ মাস বয়সের খুদে এক ল্যাব্রাডর। সে থাকে দিল্লির এক ফার্ম হাউসে। বাড়িঘর, পরিজন থেকে দূরে থাকা রঘুপতির বিশ্বস্ত সঙ্গী।
উত্তরপ্রদেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দিল্লির শেল্টারে সে থাকে। ফ্রানিকে দত্তক নিয়েছে রঘুপতি। ভার্চুয়ালি সে দত্তক নিয়েছে ফ্রানিকে।
কোভিড। লকডাউন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম। এক টানা বাড়ির মধ্যে বন্ধ। যারা একা থাকেন তাদের জন্য একঘেঁয়ে জীবন আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছেন তাদের জন্য। বাড়ছে ভয়, অ্যাংজাইটি আর মানসিক সমস্যাও। সারাদিন অনলাইনে কাজ। মানুষ অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল জগতের ওপর। নিত্য নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে সেখানে। অনেকেই এখন ভার্চুয়াল পেট রাখতে শুরু করেছেন। পছন্দের পোষ্য ‘অ্যাডপ্ট’ করা যাচ্ছে অনলাইনে।
অনেক এনজিও অনলাইনে পোষ্য দত্তকের সুযোগ দিচ্ছে। তাদের শেল্টারে থাকা পোষ্যের দায়িত্ব আপনি নিতেন পারেন। আর্থিক সাহায্যের বিনিময়ে। সংস্থার ভলেন্টিয়াররা তার দেখাশোনা করবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে স্কাইপ বা ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনি তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তবে শুধু ভার্চুয়াল না স্বাস্থ্য বিধি মেনে শেল্টারে গিয়েও আদর করে আসতে পারেন তাকে।
‘ভার্চুয়াল অ্যাডপ্টেশনে’র ট্রেন্ড বহু পশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ লকডাউনে রাস্তায়, ফুটপাতের খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সাধারণ মানুষ ঘরবন্দী হয়ে যাওয়া সঙ্কটে পড়ে পথে থাকা পশুরা। খাবারের অভাব তীব্র হয়ে ওঠে। আচরণ বদলে যেতে শুরু করে তাদের। খাদ্য সংকট থেকে এই সমস্ত অসহায় প্রাণীদের বাঁচাতে উদ্যোগী হয় বেশ কিছু পশুপ্রেমী সংস্থা।
২০১২ সালের প্রাণীগণনা অনুযায়ী গোটা দেশে রাস্তার কুকুরের সংখ্যা প্রায় ১৭ মিলিয়ন। সেই সংখ্যা এই কয়েক বছরে কিছু হেরফের হলেও একেবারে বদলে যায়নি।
দেশে অনেক সংস্থাই লকডাউনে রাস্তার প্রাণীদের দায়িত্ব নিয়েছিল। তারাই ‘ভার্চুয়াল অ্যাডপ্টেশনে’র বিষয়টি শুরু করে। বহু মানুষ এগিয়ে আসে।