স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সব ছেড়ে মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় মহিলা ফুটবলাররা

সুনীল ছেত্রীদের দুর্দমনীয় আস্ফালনে যেখানে ক্রমাগত উন্নতির পথে ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দল, সেখানে এখনও বিভিন্ন জায়গায় ব্রাত্য ভারতের মহিলা ফুটবলাররা। প্রতিবেশীদের বক্রোক্তি, অভিভাবকদের রক্ষণশীলতা ও দারিদ্রতার মতো বিষয়গুলিকে তাচ্ছিল্য করে নিজেদের স্বপ্নপূরণ করতে এখনও লড়ে চলেছেন তাঁরা।  

অরুণাচল প্রদেশের ইস্ট সায়াং জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৫তম সিনিয়র মহিলা জাতীয় দলের ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। টুর্নামেন্টটিতে ফুটবল কোচ হিসেবে অসম দলের হয়ে অংশ নিতে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন অসমের উদলগুড়ি জেলার বাসিন্দা রিংখাংশ্রী বোড়া। যদিও এই অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনে নতুন কিছু নয়, এর আগেও ২০০৭ সালে নিজের গ্রাম মলমুরা মাজাগন থেকে ফুটবল খেলার লক্ষ্যে এবং সেই স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছিলেন বোড়া, ফলে পুনরায় এই সিদ্ধান্ত নিতে কোনো অসুবিধাই হয়নি ৩২ বছর বয়সী এই প্রাক্তন মিডফিল্ডারের। ঐ বছরই দশম শ্রেণীর পড়াশোনা শেষ করে রাজ্যের হয়ে ফুটবল ক্লাবে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি।

এই চাকরি আমায় মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছিল এবং পেট চালানোর জন্য কিছু অর্থও সেখান থেকে জোগাড় করতে পেরেছিলাম আমি। জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য আমাকে কোনো অর্থ প্রদান করা হবে না। কিন্তু নিজের রাজ্যকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরার যে আনন্দ, তা টাকা আমাকে কখনই দিতে পারবে না, বলছেন বোড়া

টুর্নামেন্টটি শেষ হচ্ছে ২৪শে সেপ্টেম্বর। কিন্তু তারপর কি করবেন বোড়া? এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন তিনি, “বেঁচে থাকার জন্য কোনো না কোনো একটা চাকরি খুঁজে নেব। কিন্তু ফুটবল খেলতে চাওয়ার জন্য যে পরিবার আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল, সেখানে আর কখনই ফিরে যাব না,” বলছেন বোড়া

বোড়ার মতো বিবিধ মহিলা খেলোয়াড়দের এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করার অপরাধে অনেক মহিলা খেলোয়াড় এ সুযোগ থেকে কার্যত বঞ্চিত হন। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে, অসমের দিব্রুগড় জেলার গরুধারিয়া গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জনা সাইকিয়াকেও ১০ বছর আগে বাড়ি ছাড়তে হয় এভাবে। ভয়ঙ্কর বন্যায় নিঃস্ব হয়ে চাষি ও দিনমজুরের কাজ নিতে হয় তাঁর বাবাকে। এমনও সময় কেটেছে যখন সারাদিনে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতেন তাঁর বাবা এবং একসঙ্গে পরিবারের পাঁচজনের পেট চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। নিয়তির হস্তক্ষেপে সে সময় জাতীয় মহিলা দলের হয়ে অনুর্ধ্ব ১৭ টিমে খেলার ডাক পান অঞ্জনা। বর্তমানে তিনি অসম দলের গোলকিপার।

এক দশক আগে একটি সিলেকশন ট্রায়ালে মৃণালি বোড়া’র সাথে আলাপ হয় অঞ্জনার এবং ক্রমেই তা বন্ধুত্বের পর্বে গিয়ে পৌঁছয়। বন্ধুত্বের সূত্রে মাথা গোঁজার জায়গা হলেও তা বেশীদিন স্থায়ী না হওয়ায় আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ঝাঁট দেওয়া থেকে বাসন মাজা, সমস্ত কিছুই করতে হয়েছে তাঁকে। কঠিন প্রশিক্ষন নিয়ে প্যারামিলিটারি অসম রাইফেলস্‌-এ চাকরির জন্য আবেদন জানাতে গেলে সেখানেও বাধার সুম্মুখীন হয়েছেন। সমস্ত পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কল লেটার এসে পৌঁছয়নি তাঁর কাছে।

এত বাধার পরেও কিন্তু তাঁরা কোনোভাবে হাল ছাড়তে রাজি নন। সমস্ত কিছুকে অগ্রাহ্য করে আনন্দের উদ্দেশ্যে যে স্বপ্নের দৌঁড় শুরু করেছিলেন, তা একদিন ঠিক বাস্তবায়িত হবে এই আশাতে এখনও মাটি কামড়ে লড়াই করে যাচ্ছেন দেশের মহিলা খেলোয়াড়রা।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...