বর্তমানে সর্বোচ্চ দূষিত দেশগুলির তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে ভারত। দেশের নানা প্রান্তে, দৈনন্দিন জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলসংকট। প্রকৃতির রোষে কোথাও তুমুল বৃষ্টিতে বন্যা, অনাবৃষ্টিতে কোথাও খরা। এ অবস্থায় কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। সৌরশক্তি বৃদ্ধি ও সমুদ্রের জল পানযোগ্য করে তুলতে ‘কালো সোনা’ নির্মাণ করেছেন তাঁরা। ধাতুটি কৃষ্ণবর্ণ হওয়ার দরুণ এ রূপ নামকরণ করা হয়েছে, এমনটাই বলছেন গবেষকরা।
মুম্বইইয়ের ‘টাটা ইন্সটিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ সেন্টার’-এর বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র স্বর্ণকণা ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে দৈর্ঘ্যের বিস্তার ও দূরত্বের ব্যবধান সৃষ্টি করে একটি নতুন ধাতু তৈরী করেছেন, যা আলো ও কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। প্রকৃত সোনায় এই গুণগুলি অনুপস্থিত।
ধাতুটির রসায়নে পরিবর্তন ঘটিয়ে ধাতুটিকে তাঁরা কালো সোনায় রূপান্তরিত করেছেন যা সৌরশক্তি উৎপন্ন করা থেকে সমুদ্রের জল পরিশোধন করে লবনমুক্ত করার কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে ধাতুটিকে ন্যানো হিটার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে সোনার বিপুল চাহিদা, ভোক্তার নিরিখে ভারতকে প্রথম সারিতে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই কালো সোনা এমন অনেক কিছু করতে সক্ষম, যা করতে পারে না সাধারণ সোনা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, কালো সোনা অনুঘটক রূপে কাজ করতে পারে এবং সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট বায়ুমন্ডলীয় চাপ ও তাপমাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড কে মিথেনে পরিবর্তন করতে পারে।
সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন টিআইএফআর-এর গবেষকরা। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিবেক পলশেট্টিয়ার। এ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “ক্ষুদ্র স্বর্ণকণাগুলির সাথে অন্য কোনো ধাতুর মিশ্রণ ঘটানো হয়নি। আমরা শুধুমাত্র স্বর্ণকণাগুলির মধ্যে অন্তর্কণাগুলির দূরত্ব বিস্তার করে ধাতুটির পরিবর্তন ঘটিয়েছি। আমরা যদি কালো সোনা দিয়ে কৃত্রিম গাছ তৈরী করতে পারি, তাহলে বায়ুমন্ডল থেকে আলো ও কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ ঘটাতে পারবে সেই গাছ। তাছাড়া, কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে তা জ্বালানি বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে এই ধাতু।“ বর্তমানে এ ধরণের রূপান্তরের সংখ্যা অত্যন্ত কম। তবে গবেষকরা মনে করছেন ভবিষ্যতে খুব শীঘ্রই এই অবস্থার উন্নতি হবে।
গবেষণাটির খরচ বহন করছে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ এবং ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটমিক এনার্জি’।
গবেষণা দলটিতে রয়েছেন, মহক ধীমান, অয়ন মাইতি, অনির্বাণ দাস, রাজেশ বেলগময়ার, ভাগ্যশ্রী চলকে ও বিবেক পলশেট্টিয়ার; ইয়ঁহী লী (yeonhee lee), কিউঁজং সিম (kyunjong sim) জ্বা-মিন নাম (jwa-min nam)।