ভারতীয় রেল নিতে চলেছে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত

ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ অনেক নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে যা হয়তো ভারতীয় রেলে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে চলেছে। ট্রেন মানুষের নিত্য প্রয়োজনের একটি যাতায়াত মাধ্যম, সারা ভারত জুড়ে অসংখ্য যাত্রী রেলপথকে বেছে নেন। তাই ভিড়ও হয় লাগামছাড়া। রেলযাত্রীদের জন্য আসতে চলেছে এক খুশীর খবর। আগামী অক্টোবর থেকে দিন প্রতি বাড়তে চলেছে চার লাখ আসন।

       প্রতিটি ট্রেনে যে পাওয়ার কার থাকে সেখানে থাকে ডিজেলচালিত জেনারেটর যা সব কোচে ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই করে। কিন্তু এই প্রযুক্তি বদলে হেড অন জেনারেশন’ প্রযুক্তি আনার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। এই নতুন প্রযুক্তিতে ওভারহেড তারের মাধ্যমে কোচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এই নতুন প্রযুক্তিতে পরিবেশ দূষণ কমে যাবে একেবারেই, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ কোনোটাই হয় না এই পদ্ধতিতেবন্ধ হয়ে যাবে প্রতি বছরে ট্রেন পিছু ৭০০ মেট্রিক টন কার্বন নির্গমন। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তি জ্বালানির খরচও কমিয়ে দেবে অনেকটাই, বছরে কমপক্ষে ছয় হাজার কোটি টাকা।  

       এই পরিবর্তনের ফলে, প্রতি ট্রেনে দুটি করে বগি যুক্ত করা হবে, বাড়বে আসন সংখ্যা। রেলের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই বছর অক্টোবর মাসের মধ্যেই এমন ৫ হাজার কোচ তৈরি হয়ে যাবে। দুরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের অনেক সুবিধা হবে এতে।

এছাড়াও আরও নতুন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে রেল কর্তৃপক্ষ, তা হল সরকারী পরিচালনার বদলে রেল এবার যাবে বেসরকারি অপারেটরদের জিম্মায়। তাদের নিজস্ব রেল লাইন স্থাপন এবং ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারতীয় রেলওয়ে এই প্রকল্পে কাজ করছে বলে জানা গেছে। 

         দিল্লি-লখনৌ তেজাস এক্সপ্রেস এমন একটি ট্রেনের উদাহরণ হয়ে উঠেছে যা বিমানের মতো বিলাসবহুল চেয়ার কার সার্ভিস ও আরও অন্যান্য নতুন ফিচারে পরিপুর্ণ হবে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রেনের দায়িত্ব আই.আর.সি.টি.সি-র হেফাজতে স্থানান্তরিত করা হবে, যা ক্রমশ অন-বোর্ড সার্ভিসের জন্য প্রাইভেট অপারেটরদের ওপর আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। দিল্লি-লখনৌ তেজাস এক্সপ্রেস ২০১৬ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল তবে সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন সময় টেবিল অনুযায়ী এটি চালু করা হয়।

       ১০ই জুলাই এর মধ্যে ফাইনাল প্রপোজাল তৈরি করে রেলওয়ে বোর্ডে জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে প্রস্তাবটি রেলওয়ে ইউনিয়ন-এ গুরুতর সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে বিভিন্ন রেল ইউনিয়নের বিরোধ সত্ত্বেও ঠিক করা হয়েছে যে প্রাথমিকভাবে চালানোর জন্য দুটি ট্রেন দেওয়া হবে আইআরসিটিসি-কে। আগামী ১০০ দিনের মধ্যে বেসরকারী হাতে এই ট্রেন পরিষেবা চালু করা হবেদিল্লি-লখনউ রুটে চলবে এই ট্রেনটি। রেল কর্তৃপক্ষ সেই রুটকেই বেসরকারি হাতে দিচ্ছে যে রুট দুটি পর্যটনকেন্দ্রকে জুড়বে। তেজাস এক্সপ্রেস দিল্লি থেকে ছাড়বে বিকেল ৩টে ৩৫মিনিটে এবং লখনউ জংশন পৌঁছবে রাত ১০টা ৫ মিনিটে। বৃহস্পতিবার ও রবিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৫দিন চলবে এই ট্রেনটি। 

       রেল কর্মকর্তারা বলছেন, তেজাস এক্সপ্রেস ভারতের প্রথম বিলাসবহুল অথচ সাশ্রয়ী ট্রেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়া জনপ্রতি ১ হাজার ১৯০ টাকা, আর প্রথম শ্রেণির খরচ ২ হাজার ৫৯০ টাকা। অবশ্য এই ভাড়া একই রেলপথে চলাচলকারী অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। ট্রেনটি তৈরী হয়েছে বিলাসবহুলভাবে, এতে রয়েছে - বিমানের মতো ব্যক্তিগত এল.সি.ডি স্ক্রিন যাতে দেখা যাবে বিনোদনসহ অন্যান্য তথ্যও, অন বোর্ড ওয়াইফাই, আরামদায়ক আসন, মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট, ব্যক্তিগত পড়ার আলো, মড্যুলার জৈব-টয়লেট, অ্যান্টি-গ্রাফিটি ভিনাইল র‍্যাপিং, মিনি প্যান্ট্রি, সংযোগকারী কোচের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় দরজা, স্বয়ংক্রিয় এন্ট্রি এক্সিট দরজা, এল.ই.ডি আলো, সি.সি.টি.ভি ইত্যাদি। বেসরকারীকরণের প্রতি এই নতুন পদক্ষেপ কতটা সফল হয় এখন তারই অপেক্ষা। বেসরকারী মালিকানার প্রথম এই অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসটি যে যাত্রীদের মন কাড়বে তার কোনো দ্বিমত নেই।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...