সবুজায়ন ঘটতে চলেছে রেলেও

আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের রেলওয়েকে বিশ্বের প্রথম সবুজ রেলওয়ে হিসেবে দেখতে চান রেলমন্ত্রী-এমনটাই জানালেন তিনি গতকাল। এমনিতেই ভারতীয় রেল সারা দেশে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে আমাদের রেলের চলাফেরা। কয়লার ইঞ্জিন থেকে ডিজেল হয়ে এখন ইলেকট্রিক ইঞ্জিন এসেছে। গাড়ির চেহারা তথা সৌন্দর্যেও এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। গতি হয়েছে দুরন্ত। হয়েছে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় রেল ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও প্রথম থেকেই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে পরিগণিত হয়ে এসেছে।

      এবারে আরো এক ধাপ এগোনোর পালা। পরিবেশ নিয়ে সব ক্ষেত্রেই আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। কিভাবে আমরা পরিবেশ রক্ষা করতে পারি, তার চেষ্টা চলছে সর্বত্র। সেই দিক দিয়ে বিচার করে দেখতে গেলে এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলাই যায়। গতকাল রাজ্যসভায় রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল দাবি করেছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারতীয় রেল সবুজ রেলওয়ে হিসেবে সমগ্র বিশ্বের কাছে আত্মপ্রকাশ করবে। এই উদ্দেশ্যে দেশের সমস্ত রেললাইন বৈদ্যুতিকরণ এবং ডিজেল থেকে বায়ো ডিজেলে পরিবির্তন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী। সাম্প্রতিক বাজেটে ডিজেলের এক্সাইজ ডিউটি বাড়ানো হলেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর এখনই কোনো পরিকল্পনা রেলের নেই বলেও জানান তিনি। রেলের ১০০% শতাংশ বৈদ্যুতিকরণের জন্য অতিরিক্ত যে বিদ্যুতের চাহিদা হবে, তা মেটানোর জন্য সৌরশক্তি ব্যবহার করা হবে। সেই কারণে বিভিন্ন জায়গায় রেলের ফাঁকা জমিতে সোলার এনার্জি প্ল্যান্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। এইভাবেই ডিজেল-এর জায়গায় ইলেক্ট্রিকের ব্যবহার করতে চান রেলমন্ত্রী। এবং এভাবেই ২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশে বৈদ্যুতিক ট্র্যাক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রেলের যে সমস্ত পরিত্যক্ত জমি রয়েছে, তার সদ্ব্যবহারও করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

            এই ঘোষণা প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, যতক্ষণ না কোনো বৃহৎ লক্ষ্যের দিকে আমরা এগোনোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, ততক্ষণ আমরা কোনোভাবেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবোনা। তাই বড় সাফল্য পেতে গেলে আগে সেই মতো পরিকল্পনা করতে হবে। এই প্রসঙ্গে পীযুষ গয়াল জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে রেল ৬৫০ কিমি ট্র্যাক বৈদ্যুতিকরণ করেছিল, ২০১৬-১৭ তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪,০০০ কিমি-রও কিছু বেশি এবং ২০১৮-১৯-এ রেলের মোট ৫২০০ কিমি ট্র্যাক বৈদ্যুতিকরণ করা হয়েছে। সামনের অর্থবর্ষে আরো বেশি রেলওয়ে ট্র্যাক বৈদ্যুতিকরণ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এভাবেই প্রতি বছর বিগত বছরের তুলনায় বেশি কাজ করলেই রেল আগামী ১০ বছরে সবুজ রেলওয়ে হয়ে উঠতে পারবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন সীমান্ত এলাকায় বা ন্যারোগেজ লাইনে এই রকম বৈদ্যুতিকরণ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সেগুলিকে ডিজেলের জায়গায় বায়ো ডিজেলে রূপান্তরিত করা হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ডিজেলের জ্বালানি খাতে ২০ শতাংশ বিল হয়েছিল এবং ২০১৫-১৬ ও ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তা ১৪-১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে যত বেশি সংখ্যক বৈদ্যুতিকরণ ঘটবে রেলের ততই খরচও কম হবে।

      এভাবেই আগামী ২০২২ সালের মধ্যে দেশে যদি সত্যিই রেলের সবুজায়ন ঘটানো যায়, তা হবে এক মাইলস্টোন।

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...