খবরের কাগজের আপিসে তিনি এক কঠিন ‘অ্যাসাইনমেন্ট’। তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া আর কুবেরের গুহা থেকে রত্ন আনা ছিল একই চ্যালেঞ্জের সামিল। কত জনকে যে দরজা থেকে ফিরিয়েছেন ইয়ত্তা নেই! যেভাবে ফিরিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে সেভাবেই ফিরিয়েছেন সরকারী পুরস্কার। ভারতরত্ন!
মঞ্চে সুরের স্রোতে যিনি শ্রোতার ঘর ভাসান তিনিই নিজের অন্দরমহলে এমন কঠোরহৃদয় ভাবা যায়!
কিন্তু তিনি যে কিশোরী আমনকর। সব সম্ভব। একেবারে পছন্দ করতেন না ইন্টারভিউ দিতে। ঘনিষ্ঠ মহলে বলতেন, ‘রেওয়াজ আর শেখানোর দামী সময়টা অনেকটা বরবাদ করে দিয়ে যায় ওরা’। ‘ওরা’ মানে সংবাদমাধ্যম।
নিজের সঙ্গীতজীবন নিয়ে অচেনা কারও কাছে কথা বলা ছিল ঘোর না পসন্দ।
বোম্বাই শহরের প্রভাদেবীতে ছোট্ট একটা এপার্টমেন্টে থাকতেন। দরজা দিয়ে ঢুকেই দেওয়ালজোড়া সাদা-কালো ফটোগ্রাফ। কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো।
কেউ ইন্টারভিউ নিতে এলে প্রশ্ন শুরুর আগেই তিনি একপ্রস্থ ইন্টারভিউ নিতেন প্রশ্নকর্তার।
‘আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমায় একটু জানতে হবে গানবাজনা নিয়ে আপনার ধারণা কী’
দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর সুরের চলন সময়কে থমকে দেয়।
কিশোরী যেন এক খেয়ালী মেঘ। নিজের সাম্রাজ্যে তিনি সম্রাজ্ঞী। নাম যশের কাঙালপনা থেকে হাজার ক্রোশ দূরের তারকা। দেখা যায় ছোঁয়া যায় না। সমকালের চেয়ে একেবারে অন্যরকম।
কনসার্ট, লাইভ পারফরম্যান্স-এর ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন আপন মর্জির মালিক। অন্য শিল্পীরা যখন বিদেশে শো করার জন্য মুখিয়ে থাকতেন তিনি তখন এসব ব্যাপারে আশ্চর্য নির্লিপ্ত। অবলীলায় ‘না’ করে দিতেন বিদেশের প্রোগ্রাম। ন’মাসে ছ’মাসে একটা। বিদেশের মঞ্চে বিশেষ দেখা যেত না, বলতেন, ‘বিদেশের কনসার্টের পরিবেশে তিনি ‘কমফর্টেবল’ নন’।
কিশোরীর কনসার্ট শ্রোতাদের কাছে কিন্নরী সভার অনুভূতি। আলাপ জমতে সময় লাগলেও সেই রেশ যখন ছড়িয়ে পড়ত প্রেক্ষাগৃহে তখন আসনে নড়ে বসে কার সাধ্যি!
সূক্ষ আবেগকে কীভাবে যে অমন রাগে মেশাতেন সে রহস্য তিনি ছাড়া আর কেউ জানত না! বাগেশ্রী যেন শব্দহীন ঘোর!
সে ঘোর থেকে আজও বেরতে পারেনি শ্রোতারা। উস্তাদ জাকির হুসেনের ভাষায়, ‘কিশোরীতাই অমর করে গিয়েছেন কিছু রাগ-রাগিনীকে।
কনসার্টগুলো ভারতীয় সঙ্গীতের ল্যান্ডমার্ক। পরের একশো বছরের যা নিয়ে চর্চা চলবেই’। কিশোরীর গান শুধু গান নয়, ছবি। মানুষের জীবনের সব আবেগ বাঁধা পড়েছে তাতে। আনন্দ-দুঃখ-রাগ-যন্ত্রণা-বিষাদ- সবটাই।
তথ্যসূত্র (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)