দক্ষিণ মধ্য রেল ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ বৈদ্যুতিক টানেল তৈরী করল। চেরলোপাল্লি এবং রাপুরু রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ওবুলাভারিপল্লী-ভেঙ্কটচলম রেলওয়ে লাইন এর ওপর ৬.৬ কিমি দীর্ঘ এই টানেলটি গঠিত হল। এ বছরের ২৫জুন দু'টি মালবাহী গাড়ি ওই দুটি স্টেশনের মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে যাত্রা করে, নতুন টানেলটির উদ্বোধন করে।
টানেলটি তৈরির ফলে কৃষ্ণপতনম পোর্ট এবং তার আশপাশের এলাকার ৬০ কিমি দূরত্ব কমে গেছে। এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মালবাহী গাড়ির মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি টানেলটি ৪৩ মাস সময়ের মধ্যে অর্থাৎ রেকর্ড সময়ের মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। আগে যেখানে কৃষ্ণপতনম পোর্ট থেকে ওবুলাভারিপল্লী পর্যন্ত যেতে একটি মালবাহী ট্রেনের সময় লাগত ১০ ঘন্টা, নতুন টানেলটি নির্মিত হবার পর ওই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে ৫ ঘন্টা। মোট পাঁচ ঘন্টার সাশ্রয় স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য।
আমরা এক নজরে দেখে নেব এই টানেলটি হওয়ার ফলে কি কি সুবিধা হয়েছে:
১) এই প্রথমবার দক্ষিণ মধ্য রেলে ওভার হেড ইকুইপমেন্ট তারের মেইন্টেনেন্সের জন্য অটো টেনশন ডিভাইস(এটিডি)-এর জায়গায় কোরিয়ান টেকনোলজির স্প্রিং টাইপ এটিডি ব্যবহার করা হয়েছে।
২) টাওয়ার কার শেড সহ ওভার হেড ইকুইপমেন্ট ডিপো গঠিত হয়েছে রাপুরুতে।
৩) টানেলে নিরাপত্তার জন্য কাজ করার সময় সেই সমস্ত কর্মীরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারেন, তার জন্য সুরক্ষিত আর্থিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা কখনও ক্ষতিকারক হয়ে উঠবেনা।
৪) ৩৬ মিটার চওড়া এবং ১,২০৬ মিটার দীর্ঘ ওভার হেড ইকুইপমেন্ট বসানো হয়েছে। ওয়াল মাউন্টেড প্লেট ফিটিং-এর সাহায্যে ওএইচই ব্র্যাকেটকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে, যা টানেল লাইনিং কংক্রিটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
৫) ১০ মিটারের ব্যবধানে টানেলের অভ্যন্তরে এলইডি লাইট লাগানো হয়েছে।
৬) এই বৈদ্যুতিক টানেলের জন্য টু ট্র্যাকশন পাওয়ার সাপ্লাই সাবস্টেশন তৈরি করা হয়েছে চেরাপল্লী এবং আদুরুপল্লী-র কাছে।
৭) বাই ব্লক স্লিপার এবং ভাসলো ফিটিং-এর মত উন্নতমানের ফিটিং-এর সাহায্যে নুড়িবিহীন/পাথরবিহীন ট্র্যাক বসানো হয়েছে।
৮) ৩০০ মিমি পুরু ফুল লেন্থ লাইনিং বসানো হয়েছে।
৯) টানেলটি একেবারে সোজাভাবে গঠিত হয়েছে এবং এটির মোট দৈর্ঘ্য ৬,৬৬০ মিটার।
১০) টানেলটির উচ্চতা ৬.৫ মিটার এবং এটির কন্ট্যাক্ট ওয়ার-এর উচ্চতা রাখা হয়েছে ৫.২ মিটার।
১১) নিউ অস্ট্রেলিয়ান টানেলিং মেথড(এনএটিএম) পদ্ধতিতে টানেলটি নির্মিত হয়েছে, যার জন্য নির্মাণ খরচ পড়েছে প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা।
১২) সর্বোপরি টানেলটি নালের আকারে গঠিত হয়েছে।
এইভাবে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সৰ্বপ্ৰথম বৈদ্যুতিক টানেলটি যে ওই এলাকার বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।