ষোল বছরের জন্মদিনটা যে এত স্পেশাল হয়ে উঠবে অনন্যা বোধহয় নিজেও ভাবতে পারেনি। জন্মদিনের দিন ম্যাচ পড়েছিল বলে একটু মন খারাপ তো ছিলই কিন্তু সেই মন খারাপ ম্যাচ শেষে রাতারাতি বদলে গেল সাফল্যের খুশিতে। জিমনাস্টিকের মক্কায় সোনা জিতলেন ভারতের অনন্যা। অনন্যা গারিকিপাতি। হায়দ্রাবাদের গ্যাঞ্জেস ভ্যালি স্কুলের ইলেভেনের ছাত্রী।
একটা সোনা, একটা রূপো ছাড়াও সে জিতে নিয়েছে ৩ টে বিশেষ পুরস্কার। গত মে মাসে রাশিয়ার মস্কোয় দু’সপ্তাহ ধরে চলা স্টার জুনিয়র জিমন্যাস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায়। এছাড়াও অল-রাউন্ড-গোল্ড মেডেল এবং মিস চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব পেয়েছে অনন্যা। ভারত থেকে এই প্রথম কোনো প্রতিযোগী এই কৃতিত্ব দেখাল। অনন্যার মুকুটে আরও পালক যুক্ত হয়েছে এই প্রতিযোগিতায়। অরগানাইজার এবং স্পনসররা তাকে বিশেষ সম্মান দিয়েছে ‘রুটিন’ আর খেলোয়াড়ি আচরণের জন্য।
বিপক্ষে যেই থাকুক না কেন, প্রতিপক্ষ যত কঠিনই হোক, মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা, সাহস না হারিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় লড়াই করা সব কিছুই দেখা হয় এই প্রতিযোগিতায়। তার ভিত্তিতেই এই বিশেষ পুরস্কারটি দেন আয়োজকরা।
অনন্যার মা জানিয়েছেন, এই টুর্নামেন্টের অন্যতম স্পেশাল ব্যাপার অনন্যার জন্মদিনের দিন ম্যাচ জিতে আসা। জন্মদিনের দিন পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ সারাজীবন মনে থাকবে।
গ্যাঞ্জেস ভ্যালি স্কুল থেকে স্পোর্টস স্কলারশিপ পেয়েছে অনন্যা।
মস্কোতে এসে জিমন্যাস্টের স্পেশাল ট্রেনিং নিয়েছিল সে। ২০০৮-এর অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন অ্যানা গ্যাভ্রিলেনকোর তার কোচ ছিলেন। শুরুর দিকে কঠিন লাগলেও চ্যম্পিয়নশিপে সেরা হতে অনেকটাই সাহায্য করেছে অ্যানার ট্রেনিং।
অনন্যা নিজের রুটিন নিজেই তৈরি করেছিল। জিমনাস্টে ‘রুটিন’ বলতে ৯০ সেকেন্ডের ফ্লোর এক্সারসাইজ বলা হয়। মিউজিকের সঙ্গে জিমন্যাস্টরা যে কোরিওগ্রাফি করেন।
সেই রুটিন অনন্যা নিজেই নিজের জন্য তৈরি করেছে। তার রুটিনে জুরিরা মুগ্ধ। তাকে জিজ্ঞাসাও করা হয়। অনন্যা জানায়, দেশে তার কোনও রিদমিক কোচ ছিল না। তার উত্তরে রীতিমত অবাক প্রতিযোগিতার জাজ ও কোরিওগ্রাফাররা। বিদেশের মাটিতে পৃথিবীর সেরা প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার মানসিকতা প্রশংসিত হয়েছে সর্বত্র।
অনন্যার পারফরম্যান্সে অনেকটাই ছিল রাশিয়ার ছোঁয়া। বেশ কিছু শক্ত স্টেপ সে অনায়াসে করে দেখিয়েছে কোনও রকম ট্রেনিং ছাড়াই। ‘কুইন ওল্ড ক্লাসিক’ এ পারফর্ম করে সে। রাশিয়ায় অনন্যা রীতিমত ‘সেলিব্রিটি’। তাকে দেখলেই ঘিরে ধরছে রাশিয়ার মানুষ। অটোগ্রাফের জন্য খাতা এগিয়ে দিচ্ছে রাশিয়ার প্রতিযোগীরাও। তবে সব কিছুর নেপথ্যে অনন্যার কঠিন পরিশ্রমকে কৃতিত্ব দিয়েছেন তার মা। তার ভাষায়, তাঁর মেয়ের এমন সাফল্য তাঁর কাছে এক পৃথিবী আনন্দের সমান।