সদ্য সমাপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ইতিহাস গড়ল ভারত। একদিনের সিরিজ ৩-০ ও টি টোয়েন্টি সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতল তারা। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ড্য, যশপ্রীত বুমরার মতো একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল একদিনের সিরিজে। চোটের জন্য দলে ছিলেন না লোকেশ রাহুল এবং রবীন্দ্র জাডেজা। এমন একটি সিরিজে তরুণ ক্রিকেটারদের সামনে সুযোগ ছিল নিজেদের প্রমাণ করার।
এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছিল বিশ্বসেরা। কে ছিলেন না সেই দলে? ভিভ রিচার্ড, গর্ডন গ্রিনিজ, ক্লাইভ লয়েডের মত বিশ্বের সেরা ব্যাটাররা। বা ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং ব্যাটারদের ভয়ঙ্কর ত্রাস চার আগুনে বোলার। এই টিমকে হারিয়েই ১৯৮৩-র বিশ্বকাপ জিতেছিল কপিল দেবের ভারত। কিন্তু তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা ভারতের কাছে অধরাই থেকে গিয়েছিল।
শিখর ধাওয়ানের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল ইতিহাস গড়ল। সিরিজের প্রথম দুটি ওডিআইতে রোমাঞ্চকর শেষ ওভারে জয় পায় ভারত। প্রথম ম্যাচে ধাওয়ানের ৯৭ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ভারত তুলেজিলো ৩০৮ রান। পরে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫০ ওভারে ৩০৫ রানে (৬ উইকেটে)আটকে দেয় তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে আয়োজক দল আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৩১১রান তোলে। সাই হোপ ১১৫ রানের একটা ইনিংস উপহার দেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। পরে রান তাড়া করতে নেমে বেশ বিপদেই পড়ে ভারত। একসময় তাদের স্কোর ছিল ৭৯ রান ৩ উইকেটে। ম্যাচের হাল ধরেন শ্রেয়স আইয়ার (৬৩) ও সঞ্জু স্যামাংশন (৫৪)। তাদের জুটি ৯৯ রান তোলে। শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০০ রান। সেখান থেকে দলকে জয়ে এনে দেন অক্ষর প্যাটেল। মাত্র ৩৫ বলে পাঁচটি ছয় ও তিনটি চারের সাহায্যে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। এরপর কুইন্স পার্ক ওভালে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে (বৃষ্টির জন্য ৩৫ ওভারে হয়) প্রায় হেলায় জিতে (ভারত ২২৫/৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৭/১০) ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তাদের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ সুইপ করে ভারত। সিরিজ সেরা হন শুভমন গিল।
১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে দ্বিপাক্ষিক ওডিআই সিরিজ খেলা শুরু করার পর থেকে, ভারত কখনই তিন বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজে দুবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের তাদের দেশে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি।
একদিনের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ করলেও টি-টয়েন্টি সিরিজে তা হয়ে ওঠেনি। ৫টি টি-টয়েন্টি সিরিজে ভারত ৪-১ ফলাফলে জিতে নেয়। উল্লেখ্য এই সিরিজে দলে ফেরেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ঋশভ পান্থ, হার্দিক পান্ডিয়া সহ অনেকেই। খেলার শেষ ফলাফলে চোখ রাখলে দেখা যায় অধিনায়ক রোহিত শর্মা চার ম্যাচে একটি অর্ধশতরান সহ ২৭ গড়ে করেছেন ১০৮ রান। একই সাথে ঋশভ পান্থ চার ম্যাচে ২৮.৭৫ গড়ে ১১৫ এবং সূর্য কুমার যাদব একটি অর্ধশতরান সহ ৩৩.৭৫ গড়ে করেছেন ১৩৫ রান
প্রথম চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দ্বিতীয় ম্যাচ ছাড়া বাকি তিনটি ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটো ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯০ এর বেশি রান লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। কোন ম্যাচেই তারা ১৫০এর গণ্ডী টপকাতে পারেনি। সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় শেষ ম্যাচে রোহিত শর্মা, ঋষভ পন্থ, সূর্যকুমার যাদব, ভুবনেশ্বর কুমারকে সাজঘরে রেখেই মাঠে নেমেছিল ভারত।
দলের চার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে বিশ্রামে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারত। অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ককে বিশ্রাম দেওয়ায় নেতৃত্বের দায়িত্ব সামলান হার্দিক। তা-ও জিততে পারলেন না নিকোলাস পুরানরা। পঞ্চম ম্যাচেও ব্যাটিং ভরাডুবি দু’বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ভারতের সাত উইকেটে ১৮৮ রানের জবাবে ১৫.৪ ওভারে ১০০ রানেই গুটিয়ে গেল ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। ফ্লরিডার দু’টি ম্যাচই জিতে ভারত ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করল। সিরিজ সেরা হলেন আরশদীপ সিং।
বিষয়ত ক্যারিবিয়ান সিরিজে মূলত পারফর্ম করল ভারতের দ্বিতীয় টিম। অন্তত একদিনের সিরিজের ক্ষেত্রে তো বটেই। ১২ আগস্ট ঘোষিত হল আসন্ন জিম্বাবোয়ে সফরের ভারতীয় দল। ১৮ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট অব্দি এই সফরে তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলবে তারা। চোট কাটিয়ে টিমে ফিরছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সহঅধিনায়ক কে এল রাহুল। তিনিই এই সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। আগস্টের শেষে এশিয়া কাপ শুরু হবার কথা। ২৮ আগস্ট ভারত পাকিস্থান ম্যাচ। নতুনদের পারফরমেন্স নিঃস্বাস ফেলছে অভিজ্ঞ প্লেয়ারদের ঘাড়ে। কারা পাবেন সুযোগ সেটাই দেখার।
জিম্বাবোয়ে সফরের ভারতের স্কোয়াড: কেএল রাহুল (অধিনায়ক) শিখর ধাওয়ান (সহ-অধিনায়ক), ঋতুরাজ গায়কওয়াড়, শুভমান গিল, দীপক হুডা, রাহুল ত্রিপাঠী, ইশান কিষাণ (উইকেটরক্ষক), সঞ্জু স্যামসন (উইকেটরক্ষক), ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর, কুলদীপ, ইয়াদ। অক্ষর প্যাটেল, আভেশ খান, প্রসিধ কৃষ্ণ, মহম্মদ সিরাজ, দীপক চাহার।