আজ থেকে শহরে শুরু হচ্ছে চার দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব

আজ শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব। চার দিনের এই উৎসবে চারটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। কলকাতার সায়েন্স সিটি, নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টার, সল্টলেকের বোস ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস সহ একাধিক জায়গায় দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীদের সমাগম ঘটতে চলেছে এই উৎসব উপলক্ষে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এই উৎসব এবারে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 'ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল' শুধুমাত্র বিজ্ঞানের জটিল সূত্র নয়, মানুষের জীবনে তার প্রয়োগ এবং প্রয়োজনকে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন। আজ বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলকাতায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন। কলকাতায় বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আইআইএসএফে'র উদ্বোধনের প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে উদ্বোধন হয়েছে 'বিজ্ঞান সমাগমে'র।

               উৎসবের প্রথম দিন বৃহত্তম অ্যাস্ট্রোফিজিক্স শিক্ষণ এবং নভোশ্চরেরা যে দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা স্পেকট্রোস্কোপ ব্যবহার করেন, তা নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করবে ১ হাজার ৭৫০ জনেরও বেশি পড়ুয়া। এ বিষয়ে উল্লেখ্য, পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কোনও বস্তুর তাপমাত্রা, রাসায়নিক গঠন প্রভৃতি বিশ্লেষণের জন্য স্পেকট্রোস্কোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কার্ডবোর্ড দিয়ে বক্স বানিয়ে যে কেউ সহজেই আধুনিকতম স্পেকট্রোস্কোপের ক্ষুদ্র সংস্করণ নির্মাণ করতে পারবে। স্পেকট্রোস্কোপের এই ক্ষুদ্র সংস্করণে একটি ছোট জানালা থাকবে, যেখান দিয়ে আলো আসতে পারবে। ক্ষুদ্র স্পেকট্রোস্কোপ নির্মাণের এই যে উদ্যোগ তা প্রখ্যাত মেঘনাথ সাহা ও সিভি রমণ-কে উৎসর্গ করা হচ্ছে।

                  দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ বুধবার ইলেক্ট্রনিক্স শিক্ষণ এবং অপটিক্যাল মিডিয়া কম্যুনিকেশন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ৯৫০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী অংশ নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইনফ্রারেড সংকেত, যা ওয়ারলেস ইনফ্রারেড যোগাযোগ হিসেবে পরিচিত, তা আলোক প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে যোগাযোগ ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে নিকটবর্তী ইনফ্রারেড ব্রান্ডের যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। এই গোটা প্রক্রিয়াটি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমণ এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে উৎসর্গ করা হচ্ছে।

                 তৃতীয় দিন অর্থাৎ ৭ নভেম্বর রেডিও সাজ সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতির বৈজ্ঞানিক উপায়ে একত্রীকরণের জন্য যে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে, তাতে ৪০০-রও বেশি ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেবে। বিভিন্ন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মতো রেডিও তরঙ্গও খালি জায়গা আলোর গতিতে প্রবাহিত হয়। ট্রান্সমিটার থেকে কৃত্রিম উপায়ে রেডিও তরঙ্গ তৈরী হয়। তারপর এই তরঙ্গ রেডিও বা বেতারের অ্যান্টেনায় ধরা পড়ে। এই কর্মসূচীকে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করা হচ্ছে

                   উৎসবের শেষ দিন অর্থাৎ ৮ নভেম্বর মানব ক্রোমোজোমের একটি সর্ববৃহৎ প্রতিবিম্ব গড়ে তোলার চেষ্টা হবে। এখানেও যোগদান করবে ৪০০-রও বেশি ছাত্র-ছাত্রী। প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে একত্রিত হয়ে যে ডিএনএ মডিউল থাকে, তাকে ক্রোমোজোম বলা হয়। এগুলি ডিএনএ কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এই ধরনের প্রতিবিম্ব গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল তাদেরকে নতুন আবিষ্কারের ব্যাপারে উৎসাহিত করা, যাতে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারে।

                     এই শহর বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানমূলক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একাধিক বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর কর্মক্ষেত্রও ছিল। এই বিজ্ঞানীরাই ভারতে বিজ্ঞানসাধনাকে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতের এই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান উৎসব হিসেবে পরিচিত। এ বছরের উৎসবের মূল ভাবনা হল 'গবেষণা, উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দেশকে আরও মজবুত করা'। শহরে আয়োজিত এই উৎসবে দেশ-বিদেশ থেকে প্রায় ১২হাজার প্রতিনিধি অংশ নেবেন। উৎসবের দিনগুলিতে ২৮টি পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...