দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাচীর হলে দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর কোনটি? এর সন্ধান মিলবে খোদ ভারতেই। আজ সেই সন্ধানই দেব।
আরাবল্লী পর্বতমালার উপরে অবস্থিত ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্গ কুম্ভলগড়কে ঘিরে রেখেছে এই ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর। আপাতত এটি বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর। যার নির্মাতা মেওয়াড়ের শাসক রাণা কুম্ভ (পঞ্চাদশ শতক)। প্রাচীরের প্রস্থ গড়ে ১৫ ফুট। পাশাপাশি ৮টি ঘোড়া চলতে পারত এই প্রাচীরের ওপর দিয়ে। এই দুর্গ পরিচিত ‘"অজেয়গড় দুর্গ" নামেও।
কিন্তু এই দীৰ্ঘ প্রাচীর নির্মাণ খুব সহজ ছিল না। কথিত আছে, প্রথম সাত কিলোমিটার প্রাচীর তৈরির পরই বারবার ভেঙে পড়ে পাথরের গাঁথনি। সমাধান কল্পে এক সাধু কোনো এক ব্যক্তির আত্মত্যাগ ও সেই স্থানে এক দেবী মন্দির স্থাপনের উপায় দেন। কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে সেই সাধু নিজেই আত্মত্যাগ করেন। তিনি দুর্গ থেকে হাঁটা শুরু করে ওই ৩৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যান এবং তার নির্দেশ পালিত হয়। সেই শর্ত পূরণের পর তৈরি হয় ‘অজেয়' প্রাচীর।
যদিও কথিত আছে কেবলমাত্র একবারই এই দুর্গ জয় করা সম্ভব হয়েছিল তাও তৎকালীন ভারতের প্রতাপশালী ৪ সম্রাটের যৌথ অভিযানের মাধ্যমে। তবে মহারাণা প্রতাপ ১৫৮৫ সালে পুনরায় দখল করেন কুম্ভলগড় দুর্গ। ইতিহাস বলে এই প্রাচীর আলোকিতকরণের জন্য রাণা কুম্ভ বন্দোবস্ত করেছিলেন ১০০ কেজি তুলো এবং ৫০ কেজি ঘিয়ের। তা দিয়েই জ্বালানো হত বিশাল মশাল। প্রাচীরের গায়ে জ্বলতে থাকা সে সব অগ্নিশিখা আলোকিত করে রাখত গোটা দুর্গকে।
আজও রাজস্থান পর্যটন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই উৎসব চলে। আলোয় সেজে ওঠে এই দুর্গ ও প্রাচীর। ২০১৩ সালে ইউনেস্কো ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে এই দুর্গকে, এমনকি মিলেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাচীরের স্বীকৃতিও। আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে আছে এই অজেয়গড় প্রাচীর দুর্গ, যা ভারতের এক অনন্য ঐতিহ্যও বটে।