আমরা ভারতীয়রা যখন নিজেদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তেমন আস্থা রাখতে পারিনা, তখন একটি বেসরকারি সমীক্ষা সংস্থার সম্মিলিত রিপোর্ট-'ফিকিই ওয়াই নলেজ পেপার অফ মেডিক্যাল ট্যুরিজম ইন ইন্ডিয়া'-র ভিত্তিতে জানা গেল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা করাতে মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে বিদেশিরা যে কয়েকটি দেশে যাচ্ছেন, তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ভারতের নাম। এই তালিকায় ভারত ছাড়া অন্যান্য যে কয়েকটি দেশের নাম উঠে এসেছে, সেগুলি হল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর। এছাড়াও তুরস্ক, তাইওয়ান, ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতেও চিকিৎসা করতে প্রচুর বিদেশী যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে এসেছেন ৪লক্ষ, ২৭হাজার ১৪জন বিদেশী। ২০১৭ সালেই সেই সংখ্যা একলাফে ৫লাখে (৪লাখ, ৯৫হাজার, ০৫৬জন) পৌঁছেছে। সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, বিদেশিদের মধ্যে যারা ভারতে আসেন চিকিৎসার জন্য তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই বেশি। চিকিৎসা করতে আসা বিদেশিদের মধ্যে প্রায় ৪৫%ই বাংলাদেশের। বাকিদের মধ্যে বেশি রয়েছেন আফগানিস্তান, মালদ্বীপ এবং ইরাকের মানুষ। এভাবে প্রচুর সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা করতে ভারতে আসছেন কারন অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে চিকিৎসার খরচ অনেক কম(আমেরিকার বিচার অনুসারে)। ভারতের বিভিন্ন কর্পোরেট হাসপাতালের খরচ জোগাতে যেখানে দেশের মানুষ নাকানি-চোবানি খাচ্ছেন, সেখানে বিদেশিরা প্রায় ৬৫-৯০% ছাড় পান চিকিৎসায়। ওই রিপোর্ট বলছে, আফ্রিকার মানুষ নিজেদের দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গেলে ৯৫%-ই এশিয়ার দেশগুলিতে আসেন। এশিয়ার দেশগুলি থেকে চিকিৎসার জন্য বাইরে গেলে ৯৫% মানুষ-ই এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে যান। মধ্যপ্রাচ্যের ৩২ শতাংশ, উত্তর আমেরিকার ৪৫ শতাংশ এবং ইউরোপের ৩৯শতাংশ মানুষ তাঁদের চিকিৎসার জন্য এশিয়ার দেশগুলিকেই পছন্দ করেন।
বিদেশী রোগীরা মূলতঃ পাঁচ ধরনের চিকিৎসা করাতে ভারতে আসছেন। বিকল্প চিকিৎসা বা অল্টারনেটিভ মেডিসিন, বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন, বাইপাস সার্জারি, চোখের চিকিৎসা এবং হিপ রিপ্লেসমেন্ট। এই চিকিৎসাগুলির খরচ যথেষ্ট বেশি বলে ভারতে আসেন রোগীরা তাদের চিকিৎসা করাতে, যাতে তাদের চিকিৎসার খরচ কিছুটা কমে। এইভাবে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের মানুষের নাগালের বাইরে গেলেও বিদেশের মানুষের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।