আমার স্বাধীনতা- ১

আমার চোখে স্বাধীনতা? সত্যি বলবো? যদিও আমি জানি সত্যি কথাটা বললেই পাঠকরা আমাকে দেখতে পেলে চাট্টি গালি দেবেন, দু ঘা পিঠে দিলেও দিতে পারেন, পড়ার পর দাঁত কিড়মিড় করবেন, এই লেখা যে মানুষটি দায়িত্ব নিয়ে ছাপাচ্ছেন বা পাঠকদের উপর চাপাচ্ছেন তাকেও হেনস্থার আর বাকি রাখবেন না। কিন্তু পাঠকবন্ধুরা, সত্যিটা যে সত্যিই। চাঁদ, সূর্য, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি, দুই দুগুনে চার-এর মতোই সত্যি। তো... বলে ফেলি? আমার কাছে 'স্বাধীনতা' মানে হলো নিজের ঘরটা ইচ্ছেমতো অগোছালো করে রাখা, খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে মশলার তাকে কৌটোদের পিছনে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কিশোর উপন্যাস সমগ্ৰ খুঁজে পাওয়া এবং কড়াইতে চাপানো পটলের তরকারি বা ডিমের ঝোলের কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি" পড়তে শুরু করা এবং.... তরকারি পোড়ার গন্ধ পেয়ে হঠাৎ সচকিত হয়ে "এই রে গেল গেল" বলে গ্যাস ওভেনটা অফ করে "ধুৎ, আজ শুধু আলুসিদ্ধ ডাল দিয়ে ভাত খেলেই চলবে"... ভেবে বইটা নিয়ে চারপাশের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে শীর্ষেন্দুতে বিভোর হয়ে যাওয়া।
এটাই আমার কাছে স্বাধীনতা।

কিন্তু পাঠকবৃন্দ.... হতাশ হবেন না। আরো দু চার কথা এখনো বাকি আছে। একটু ধৈর্য ধরুন... এই মনে করুন... একটা বৃষ্টি ভেজা সকাল বেলা। কিছুতেই আপনার বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না। দিব্যি জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে গরম দুকাপ চা আর "রিমঝিম গিরে সাওন"... ডুব দিয়ে দিন। বুঝবেন স্বাধীনতা কাকে বলে।
কিন্তু একটু পরেই খবরের কাগজটা এলো। একটু দাঁড়ান। একবারটি ভেবে দেখুন তো যে ছেলেটি সাইকেলে করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এসে আপনার জানালা দিয়ে কাগজটা ছুঁড়ে দিয়ে গেল ওর ও কি আজ ঘরে বিছানায় শুয়ে চা খেতে খেতে গান শুনতে ইচ্ছে করে নি? একশোবার করেছে। কিন্তু ও ওর কাজটায় ফাঁকি দেয় নি। তার পিছনে দুটো কারণ... এক– উপার্জন, দুই– কর্তব্যনিষ্ঠা।

এইইই... ঠিক ধরেছেন বন্ধুরা.... আমার কাছে স্বাধীনতা মানে এই দুটোই। স্বাধীনতা মানে এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন... যেখানে কাজের কোনো নারী পুরুষ ভেদাভেদ থাকবে না। নিজের নিজের শিক্ষা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেকটা মানুষ সৎভাবে উপার্জন করবে। মানুষ মানুষকে সম্মান করবে। প্রত্যেক শিশু দু বেলা পেট ভরে খেতে পাবে এবং বিকেলে মাঠে তুমুল খেলাধুলার পর ঘরে এসে সন্ধ্যা বেলায় ঢুলতে ঢুলতে ইংরেজি গ্ৰামার মুখস্থ করবে বা অঙ্ক না পারলে মা'র কাছে কানমলা খাবে। আর জিজ্ঞেস করবে "দাদু, এই কবিতাটার মানে কী গো?...
"চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির"....

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...