আমাদের বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা আর ঘরে বাইরে কাজের চাপ বদলে দিয়েছে আমাদের রান্নাঘরকে। টাইম ম্যানেজমেন্ট এখন সেখানে মূলমন্ত্র। তাই রোজকার রান্নার অভ্যাসেও এসেছে বদল। বদলেছে খাওয়াদাওয়া। ফল হিসেবে জীবনে জড়িয়েছে মুঠো মুঠো ট্যাবলেটের অভ্যাস। কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই আছে অনেক রোগের সহজ সমাধান।
আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় এবং শরীরের যত্ন নিতে তাদের চেয়ে নির্ভরশীল আর কিছু হতেই পারে না। চেনা শাকপাতাই সেরা বন্ধু অনেক ক্ষেত্রে।
নিত্যদিন সবুজ শাক খাওয়ার অভ্যাস অনেক রোগের বিরুদ্ধেই বর্মের কাজ তাই প্রতিদিন শাক খাওয়া উচিত।
এই নিবন্ধে এমন কিছু ভেষজগুণ সম্পন্ন শাকের তালিকা তুলে ধরা হল।
হিঞ্চা শাক: হিঞ্চা বা হিমলোচিকা শাকের অনেক নাম। হিঞ্চে, হিংচা, হাড়হাচ, হেলচী, তিতির ডগা, তিতির শাক, তিতির ডাটা, তিতা ডাটা, আবার কোথাও এলিচি শাক বলা হয়। জন্মায় জলে। এদের ফুলের রঙ সাদা। কাণ্ডের শীর্ষে গুচ্ছাকারে এর ফুল ফোটে। শীতকালে ফুল ও ফল হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, স্নায়ুরোগ, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভেষজগুণ সম্পন্ন হিঞ্চা শাকের রস গরমকালে মাখলে ঘামাচি ও অন্যান্য ক্ষত স্থান সারিয়ে তুলবে। বসন্তরোগের প্রতিষেধক হিসেবেও এই শাক ব্যবহৃত হয়। পায়ের ব্যথা, কোমরের ব্যথা থাকলে হিঞ্চা শাকের রস গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া খুব উপকারী। লিভারের সমস্যায় কাজ দেয় হিঞ্চা শাক। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। এই শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।
ঢেঁকি শাক: সারা বছর প্রায় শুকিয়ে থাকলেও বর্ষা এলে তরতাজা হয়ে ওঠে ঢেঁকি শাক। ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকায় এই শাক দেখতে যায়। ঠান্ডা লেগে কাশি, লিভারের ইনফেকশন সারিয়ে তুলতে, শ্বাসতন্ত্র সতেজ রাখতে, রিকেট রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয় ঢেঁকি শাক। এই শাকে পটাসিয়াম বেশি থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ঢেঁকি শাকের স্ত্রীপ্রজাতির উদ্ভিদের মূল থেকে একধরনের ওষুধ তৈরি করা হয় যা সন্তান জন্মদানের সময় মহিলাদের স্তনের ব্যাথা সারাতে কার্যকরী। এই গাছের শুষ্ক মূল থেকে তৈরি পাউডার ঘা-ক্ষত নিরাময় করে। এটিকে জন্ডিসের জন্য সবচেয়ে ভাল ঔষধ বলে মনে করা হয়। কোন ভাবেই ভালো করে রান্না না করে এই শাক খাওয়া উচিত নয়।
পালং শাক: পালং শাক 'সুপারফুড' নামেও পরিচিত। স্বাস্থ্যের পক্ষের খুব উপকারী এই শাক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা হার্ট ও রক্তচাপ ভালো রাখে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় পালং শাক খুব কার্যকরী। প্রতিদিন এই শাক খেতে পারলে মানসিক চাপ কমে যাবে। এছাড়াও হার্ট, কিডনির সমস্যায় পালং শাক খুব উপকারী।
কলমি শাক: কলমি শাক জলে জন্মায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তল্পতার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে কলমি শাক খেলে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এই শাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কলমি শাকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় সুতরাং এই শাক খেতে পারলে হাড় মজবুত হয়। এছাড়াও কোনও পোকামাকড় কামড়ালে সেখানে যদি কলমি শাকের পাতার রস লাগানো তাহলে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। আমাশার সমস্যা কমে। প্রস্রাবের সময়ে যাঁদের জ্বালা-যন্ত্রণা হয়, তাঁরা এই শাক খেলে ওই জ্বালা কমে।
নটে শাক: গ্ৰাম বাংলার বহু গ্ৰামে নটে শাকের চাষ হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই শাক। ক্যালসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক সালফার, ক্লোরিন, ভিটামিন-বি থাকে নটে শাকে। চুলকানির সমস্যা সারিয়ে তোলা যাবে নটে শাক ভাজা খেলে। বিছে বা অন্যান্য কোনও বিষধর পোকামাকড়ের বিষ কাটাতে নটের শাকের শিকড়ের চূর্ণ দুধ অথবা মধু দিয়ে মিশিয়ে খেতে হবে। নটে শাকের শিকড়ের রস গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।