কৃষিক্ষেত্রে বাড়ছে জৈবহাটের চাহিদা। ‘বিষমুক্ত’ ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে জৈব কৃষির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। পরম্পরা কৃষি বিকাশ যোজনায় তৈরি হচ্ছে জৈব গ্রাম। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব উপায়ে ফসলের রোগপোকা দমনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যার ফলেই জেলায় জেলায় গড়ে উঠছে জৈবহাট। সেখানে সরাসরি চাষিরা রাসায়নিক বিষমুক্ত ফসল বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। ভিড়ও বাড়ছে ক্রেতাদের। তবে এ বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রচুর ফলন পাওয়ার আশায় কৃষকদের অনেকেই দিনের পর দিন চাষের জমিতে যথেচ্ছ হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে এসেছেন। এর ফলে মাটি তার স্বাস্থ্য হারাতে বসেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাটির স্বাভাবিক গঠন, জলধারণ ক্ষমতা। কমছে মাটিতে বসবাসকারী উপকারি জীবাণুর সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে মাটি পুরোপুরি বন্ধ্যা হয়ে যাবে। এর থেকে বাঁচতে একমাত্র পথ জৈব কৃষি। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, জৈব কৃষির মূল কথা হল, রাসায়নিক সার, কীটনাশক বা রোগনাশক বা আগাছানাশক ব্যবহার না করা। স্থানীয় প্রযুক্তি ও সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন। মাটিতে বসবাসকারি উপকারি জীবাণুর সংখ্যা এবং মাটির মধ্যে জৈব বস্তুর পরিমাণ বৃদ্ধি করা। মাটির উর্বরতা ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা। এই বিষয়ে আরও জানা যায়, শুধু চাষবাস নয়, মিশ্র খামার পদ্ধতি অর্থাৎ একইসঙ্গে কৃষি, প্রাণীপালন ও মাছচাষ প্রভৃতির সমন্বয় ঘটানো। কৃষি বিজ্ঞানীদের দাবি, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে জৈব কৃষির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
জৈব পণ্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের পক্ষে নিরাপদ। জৈব ও জীবাণুসার প্রয়োগের ফলে মাটিতে বা ফসলে রাসায়নিক দূষণ ঘটে না। আরো জানা যায়, জমিতে প্রয়োগ করা রাসায়নিক সারের অপচয় অনেক বেশি। তুলনায় জৈব ও জীবাণুসার কম পরিমাণে লাগে। পতিত জমিকে জৈব কৃষির আওতায় এনে চাষের এলাকা বাড়ানো যায়। জৈব কৃষির ফলে জীব বৈচিত্র রক্ষা পায়। মাটির উর্বরাশক্তি বজায় রেখে টেঁকসই কৃষি ব্যবস্থার জন্য জৈব কৃষিই একমাত্র বিকল্প পথ বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে আরও জানা যায়, অ্যাজোলা, ধইঞ্চা চাষ করে জমিতে মিশিয়ে দিতে পারলে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। জৈব কৃষিতে তরল সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাছ সহজেই তরল সার গ্রহণ করতে পারে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কয়েকটি পরীক্ষিত ও সুপারিশকৃত জৈব তরল সার বলতে সঞ্জীবক, জীবমৃৎ, পঞ্চগব্য, সমৃদ্ধ পঞ্চগব্য প্রভৃতি। ২০ কেজি গোবর, ১০ লিটার গোমূত্র, ৫০০ গ্রাম ঝোলাগুড়, ৩০ লিটার জলে গুলে আবদ্ধ ড্রামে ১০দিন ধরে পচানো হয়। তার পর ওই মিশ্রণ জলে মিশিয়ে ২০ গুণ বৃদ্ধি করে তৈরি হয় সঞ্জীবক তরল সার। জমিতে গোবর সার, খামার সার, কম্পোস্ট সার, কেঁচোসার, নানা ধরনের খোল, হাড়ের গুঁড়ো প্রভৃতি প্রয়োগ করেও মাটির উর্বরাশক্তি বাড়ানো যেতে পারে। এই ধরনের নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষি কাজ করলে সুফল মিলবে বলে দাবি কৃষি বিশেষজ্ঞদের।