আজ বলব এই বাংলার এমন এক পুজোর কথা যাকে নিয়ে ইতিহাসের অন্ত নেই। কথিত আছে যে, অষ্টমীর রাতে মা নিজেই আসেন ভোগ রান্না করতে। কোথায়? বলব সেই কথাই।
বলছি ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১৮ কিমি পশ্চিমে ডুলুং নদীর পাশে অবস্থিত জামবনি থানার অন্তর্গত চিল্কিগড়ের কনক দূর্গা মন্দিরের কথা। বহু ইতিহাস জড়িত আছে এই মন্দির গাত্রে। ঝাড়গ্রাম মাও এলাকা নামেই খানিক ভীতি উদ্রেক করলেও এখন সে সমস্যা অনেকটাই নিরসন হয়েছে, বর্তমানে এটি একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র।
এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল দেবীর স্বপ্নাদেশ। দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েই ১৭৪৯সালে তৎকালীন রাজা গোপীনাথ সিংহ মওগজ এই কনকদুর্গা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে যে, গোপীনাথ সিংহ স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্ত্রীর হাতের কাঁকন দিয়ে অষ্টধাতুর মূর্তি নির্মাণ করান। পুরোহিত হিসেবে উড়িষ্যা থেকে নিয়ে আসেন রামচন্দ্র সারেঙ্গীকে, আজও তার বংশধরেরাই পুজো করেন। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে শুধু মন্দিরের, কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আজ যেখানে নতুন মন্দির দাঁড়িয়ে,তার ঠিক বাঁ-পাশে এখনো আছে পুরোনো মন্দিরটি। পুরোনো মন্দিরটি বজ্রপাতের কারণে মাঝখান থেকে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়, তাই ১৯৩৭ সালে এই নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন গোপীনাথ সিংহের বংশধরেরা।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, চারদিকে গভীর জঙ্গলের মধ্যে সামন্ত রাজাদের এই মন্দিরে আজও অষ্টমীর রাতে দেবী নিজেই নিজের ভোগ রান্না করেন। পুজো উপলক্ষে দর্শকদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে থাকে মন্দির চত্ত্বর। কথিত আছে আগে এই পুজোয় হতো নরবলি, কিন্তু দেবীর নির্দেশে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে অষ্টমীর দিন পাশের জঙ্গলে হয় পাঁঠা বলি। নিশা পুজোয় অংশ নেন শুধু মাত্র রাজপরিবারের সদস্যরাই।
এই পুজোর ভোগের মধ্যেই এক বিশেষত্ব আছে, শুধু পুজোর সময় নয়, সারা বছরই মায়ের ভোগে থাকে ভাত, বিভিন্ন তরকারি, খিচুড়ি ও মাছ। কিন্তু সাথে দেওয়া হয় হাঁসের ডিম। হাঁসের ডিম আবার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে দেবীকে নিবেদন করা হয়। ডিমের বিষয়টি কিন্তু বেশ অভিনব। কালিকা পুরাণ ও তন্ত্র মতে দেবীর পুজো হয়। সেদ্ধ হাঁসের ডিম তন্ত্র মতে শোধন করে পুজোর মাঝে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়।
যদিও এই মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঐতিহাসিক মত আছে। অনেকের মতে, গোপীনাথ সিংহের এই স্বপ্নাদেশ ছিল আধিপত্য স্থাপনের এক মাধ্যম। সে যাইহোক ২০০৭-২০০৮সালে দুবার মূর্তি চুরি হওয়ায় নতুন করে তৈরি হয় অষ্টধাতুর মূর্তি। মন্দিরে বসে সিসিটিভি। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রেও জায়গা করে নেয় কনকদুর্গা মন্দির। আজও মন্দিরে মায়ের আগমনের বিষয়টি ভক্তকুলের কাছে সমাদৃত।